-মমতা দাস
বাঁধানো বটগাছটা যেন গ্রামটি অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে যুগের পর যুগ| রোজ সকালে আর বিকেলে তার চাতালের চারপাশে বসে থাকেগ্রামের মানুষজন ছেলেছোকরারা| কত গল্প কত কাহিনীবোনা হয় তাকে ঘিরে|
গ্রামের নাপিত বলাই| এই বটগাছের একটা কোণে রোজদিন তার দোকান বসে| ছোট একটা টুল,একটা চেয়ার,আয়না,তার বাক্স সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে কাজে মন দেয় বলাই| একদিন দুপুরেবলাই প্রায় আধঘুম অবস্থায় বসে ছিল তা টুলের ওপর|এমন সময় হঠাৎ একটা আওয়াজ হওয়ায় চমকে ওঠে বলাই| দেখে তার সামনের আয়না দিয়ে দেখে তার সামনের আয়না দিয়ে একটা কালো কুচকুচে কোকড়ানো চুলে ঢাকা অস্পষ্ট মুখ| কেমন যেন ঝুলে আছে উল্টো ভাবে গাছ থেকে|চমকে উঠে বলাই|এক দৌড়ে সোজা গ্রামের ভেতর বাড়ির কাছে| এসেই হাঁপাতে শুরু করে| সেই সময় তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক স্কুল মাস্টার স্কুল মাস্টার| বলাইয়ের অবস্থা দেখে তিনি পুরোটা জানতে চান কী হয়েছে|বলাই আমতা-আমতা করে প্রায় পুরো বিষয়টাই জানায়|
মাস্টার সমস্তটাই বুঝতে পারলেন| বলাই কে কিছু না বলে তিনি সোজা দুর্গা মন্ডপে হাজির হলেন|সেখানে তিনি বলেছিলেন আজ বিকেলে সভা আছে|সেটা হবে বাঁধানো বটগাছের নিচে|তিনি বলায় কেউ বললেন সেখানে আসতে| বলাই রাজি না হলেও তার স্ত্রী তাকে ভরসা দিল কোন অসুবিধা হবে না|
বিকেল বেলা সবাই আসতে শুরু করেছে বট গাছের কাছে|বলাইয়ের খবরটা প্রায় গ্রামে চাউর হয়ে গিয়েছিল|তাও যারা ভয় পায়নি তারা পৌঁছে গেছে পৌঁছে গেছে বট গাছের কাছে|মাস্টারমশাই চলে এসেছে|শুরু হলো সভা|
মাস্টারমশাই একটা বাচ্চা ছেলেকে তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছে|মিনিট পাঁচেক পর তিনি সবার সামনে ছেলেটিকে আস্তে আস্তে বট গাছের মধ্যে উঠতে বললেন|ছেলেটি ছোট রোগাসোগা|তাই মুহুর্তের মধ্যে সে অনেকটাই উঠতে পারল|কিছুদিন ওঠার পরই সে দেখল গাছের একটা ডাল এর ভেতরে পুরের পুটলি খুব শক্তভাবে বাধা| আর তার পাশে একটা দড়ি বাঁধা| সেগুলো নিয়ে সে নিছে নেমে আসলো|
এবার মাস্টারমশাই সবার সামনে পুটলি খুললেন|তার ভেতর একটা সিঁদকাঠি, আরেকটা ছোট তেলের বোতল|এবার আর বুঝতে হলো না বুঝতে দেরী হলো না কারোরই|সবাই বুঝতে পারলো যে চোর আশ্রয় নেয় এই বটগাছের ভেতরে দিনের বেলা রাতে চুরি করতে বেরায়|
বলতে শুরু করলেন মাস্টারমশাই|''আমার এক ছাত্র গতকাল খবর দিয়েছিল সে নাকি কাউকে একটা উঠতে দেখেছিল বটগাছের ভেতরে|তারপর গতকাল রাতে খবর পাই রফিকের বাড়িতে ছোড়ে হানা দিয়েছে|আজ যখন বলাইয়ের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন সব শুনে বুঝতে পারি পুরো ঘটনা|আর ও বুঝতে পারি যে বলাই আয়নাতে চোর কে দেখেছে যে কিনা তখন উল্টো ভাবে নামার চেষ্টা করছিল'' বলে বলার দিকে তাকালেন মাস্টারমশাই|
বললেন ''বুঝলে তো বলাই ভূত নয় ঘুম থেকে উঠে তুমি চোরকে উল্টোভাবে ঝুলতে দেখেছো|''সবাই বার হো হো করে হেসে উঠলো| মাস্টারমশাই তাদের থামিয়ে দিয়ে বললেন ''সঠিক কিন্তু আগে চোরকে ধরার ব্যবস্থা সবাই করো''|
Opmerkingen