top of page

কবিতা গুচ্ছ- ফেব্রুয়ারি সংখ্যা

কবিতা:

রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

-জামাল আনসারী


আমার ভাই-এর তাজা রক্তে রাঙানো

স্বর্ণাক্ষরে লেখা নাম --অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।

সেই অমৃত নাম, আমি কি জীবনে- মরণে কখনো ভুলিতে পারি?

না। তা আমি কখনো ভুলিতে পারিব না।

'নক্সীকাথাঁ বোনা রাতে স্বপ্নের প্রভায়' রঙিন

নক্ষত্রের মতো জ্বলে ওঠে,অমর ভাষা শহীদ --

আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ, আব্দুস সালাম,

আব্দুল জাব্বার,এবং শফিউর রহমানের নাম।

বঙ্গ মাতার চির বীরসন্তানদের আত্ম বলিদানে

আমার মায়ের মুখের ভাষা, মাতৃভাষার

কৌস্তুভ মৃগসম সৌরভ পৌঁছে গেছে

বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে ত্রিপুরা, আসাম,

দক্ষিনের কর্ণাটক, সুদূর দীপপুঞ্জ আন্দামান।

বাংলার রামধনু বিকেলের আকাশ জুড়ে,

বর্নে- গন্ধে ছড়িয়ে আছে একুশে ফেব্রুয়ারির নাম।


একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু ক্যালেন্ডারের শুকনো পাতায় লেখা একটা দিন নয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি একটা বিপ্লবের নাম।

জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পাকিস্তানি উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে

আপোষ হীন সংগ্রমের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃ প্রকাশ।

একুশে ফেব্রুয়ারির হাত ধরে একবিংশ শতাব্দীর

ঝড়-ঝঞ্জা অতিক্রম করে দুরন্ত বেগে ধাবমান ষ্টীমার,

বিশ্বের বাইশ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জয়গান।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো 'ফ্যাকাসে দেওয়ালের রাত্রিমাখা গন্ধে'

মর্মরিত সেকালের পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর

পৈশাচিক গোলা বারুদের উল্লাসী সন্ধ্যে।

রৌদ্রছায়া উল্কি আঁকা গ্রাম বাংলার নিকানো উঠানে,

কাঠের পিঁড়েতে বসে এখনো শোনা যায়....

ঐ দূর নীলচে আকাশে বেতারে ভেসে আসা,

সবুজ ধানের মাঠ,জ্যোৎস্না আলোকিত নদী বক্ষের

ভাটিয়াল, মুর্শিদি গানের চির পরিচিত সেই সুর।


আমার মায়ের সযত্নে লালিত যে ভাষা

সেই ভাষার অমৃতোপম নাম বাংলা ভাষা।

কি বৈচিত্র্যময় তার কথন শৈলী?

রাঢ়ী, বঙ্গালী, বরেন্দ্রী,ঝাড়খণ্ডী,রাজবংশী উপভাষা,

সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী মানুষের এই ভাষাতেই মিটে মনের আশা।

এই ভাষাতেই ধ্বনিত শিউলি ঝরা সকালে

"জনগনমন-অধিনায়ক জয় হে"

"আমার সোনার বাংলা-আমি তোমায় ভালোবাসি

"দুটি সার্বভৌম দেশের জাতীয় সংগীতের ঐক্যবোধে,

এপার বাংলা অপার বাংলা ভাই ভাই আজও পাশাপাশি।

আমি গর্বিত এই অমর বাংলা ভাষার তরে,

বাংলার বিজয় পতাকা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ইসলাম,

পৌঁছে দিয়েছে প্রাচ্য -পাশ্চাত্যের দ্বারে দ্বারে।

ইউনেস্কো রেখেছে বাইশ কোটি বাংলা ভাষীর মান,

একুশে ফেব্রুয়ারি তাই পেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান।

আমার মায়ের মুখের ভাষা,আমার মাতৃভাষা,

যাদের আত্মবলিদানে গৌরবান্বিত বাংলানাম,

সেই অমর বাংলা ভাষা শহীদরা অন্তরে পেয়েছে ঠাঁই

অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানায় শহীদদের শত কোটি প্রনাম।

তারিখ ২১. 0২. ২০২০

গ্রাম করনবাঁধ, পোস্ট ঝাঁপড়া,

জেলা পুরুলিয়া

কবিতা:


মাতৃভাষা

-সাহেব ইসলাম


সব কিছুর চেয়েও দামি

মোদের বাংলা ভাষা

সেই ভাষাতেই আছে

মোদের সুখের আশা।

সবার উপর মাতৃভাষার

হয়রে ভাই ঠাই

দিনরাত মনের মাঝে

তাকে খুঁজে পাই।

জড়িয়ে আছে এই ভাষা

মোদের প্রশ্বাসে

মিশে আছে আনন্দে

আর উচ্ছাসে।

এই ভাষাতে আপন মাটির

গাইবো মোরা গান

শপথ নিচ্ছি সারা জীবন

রাখব তার মান।

কবিতা:


মুক্ত

-প্রদীপ চক্রবর্তী


মানুষ যখন আদিম ছিল

ছিলনা কোনো বারণ,

সবকিছুই ঘটত নাকি

ভগবানের কারণ।


ভূমিকম্প,অতিমারী

আসত যখন বন্যা,

ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে

মানুষ ধরত কান্না।


আমরা আজকে আধুনিক

মনটা তো নয় পরিস্কার,

আধুনিকতার মোড়ক ঢেকে

পালন করছি কুসংস্কার।


যুক্তি দিয়েই দুনিয়া শুরু

যুক্তি দিয়েই শেষ?

সংস্কার মুক্ত সমাজ হলে

এগিয়ে যাবেই দেশ।


মনোরা পিক্

নৈনিতাল ,উত্তরাখন্ড


কবিতা:


গ্রহণে সবকিছু করুন

- রাজা দেবরায়


যেকোনো গ্রহণে খাওয়া যায়,

প্রতিদিনের কাজ করা যায়।

যদি ভাবেন গ্রহণে আলো কম,

তাই ক্ষতিকর জীবাণু দেখাবে দম!

তবে জেনে রাখুন সেটা আসল ভ্রম!

কারণ একটু বোঝার চেষ্টা করুন,

সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে একটু ভাবুন।

গ্রহণের আলো কি আসলে

রাত্রিবেলা থেকেও কম ?

রাতে যদি জীবাণুরা দেখাতে না পারে শক্তি,

কুসংস্কার মন নিয়ে কেনো করবো ভক্তি?

তাই গ্রহণে বিন্দাস সবকিছু করবেন,

আর অন্যদেরও এই কথাটা বোঝাবেন




কবিতা:

ইনফিনিটি ক্রুসেড

-শ্রীকুমার মন্ডল


জন্মের পর ক্ষনিকের মধ্যেই আমি আমার মনুষ্যত্ব হারিয়েছি।

কখন?

যখন, সদ্যজাত অবচেতন মস্তিষ্কে তোমরা ধর্ম ও কুসংস্কারের অসহনীয় বিষ প্রয়োগ করেছ।

জ্বালায় ছটফট করতে করতে কতনা যন্ত্রণা পেরিয়েছি।


একটুও মায়া হয়নি তোমাদের।

হওয়ার কথাও নয়।

কারণ, সেই বিষের জ্বালায় একই ভাবে তোমরাও জ্বলেছ,

তোমাদের সেইসব পূর্ব পুরুষদের সৌজন্যে,

ক্রুসেডের তরোয়াল পুরুষত্ব কেটে নিয়েছিল যাদের।


ঠিক যেমন আমি জ্বলে পুড়ে মরেছি তোমাদের জন্য।

এটাও যথেষ্ট নয়।

থমকে থাকবে না এ-অবধি,

কারণ আমিও তো মারব আমাদের সন্তান দের।

ঠিক তোমাদের মত।

সমস্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মরবে একই ভাবে।

হয়তো বা এই জ্বালা সহ্য করেও বাঁচবে কিছু মানুষ,

তবে তা খুবই সামান্য।


ধ্বংস হয়েছে এই প্রজন্মের ক্রিয়েটিভিটি।

সেই জ্বালায় বিনষ্ট হয়েছে আমাদের ছোট্টো হৃদয়ের সেনসিটিভিটি।

শিরায়, ধমনীতে গিয়ে শরীরের সমস্ত রক্তকে বিষিয়ে দিয়েছে সেই বিষ।

সেই বিষেরই chemical reaction এ যখন আমি আমার বিচার, বিবেক, জ্ঞানের তৃষ্ণা, কৌতূহল, উপলব্ধি, সচেতনতা সমস্ত হারিয়েছি সমূলে,

তখনই আমার ভেতরে থাকা সেই ধর্মীয় দানব জন্ম নিয়েছে,

ধ্বংস করেছে এই জীবনের মোটিভিটি।


আমি এখন এক সেন্স হীন জম্বী, মানুষের মত দেখতে এক শয়তান।

যেই শয়তান এখন ঈশ্বর নামক এক অলীক কল্প বস্তুর দাস।

ওই ঈশ্বর নাকি উপাসনা চায়, সেবা চায়।

ভেদাভেদ চায়, রক্ত চায়, দাঙ্গা চায়, হিংসা চায়, মাথা চায়,

চোখ বেরকরে থাকা বিভৎস কাটা মাথা,

শুধু নিজেকে করতে প্রমান।


ওই ঈশ্বর নাকি প্রতি ক্ষণে ক্ষণে পরীক্ষা নেয়।

আর যে ওই পরীক্ষায় ফেল করে, সে নাকি মৃত্যুর পর নরকে যায়,

যাতে আরো হিংসা, আরো যন্ত্রণা, আরো কষ্ট দেখে দেখে পরীক্ষার জন্য আরো উপযুক্ত হয়।

ঠিক যেমন জেলে ক্রিমিনালদের সাথে থাকলে, নিরীহ মানুষও ক্রিমিনাল হয়ে ওঠে,

আর প্রতিদানে সমাজে আরো বহুগুন হিংস্রতা ফিরিয়ে দেয়।


ঈশ্বরই শয়তানদের কেন্দ্রীভূত প্রাণ।

আর আমি আজ ওই পরমেশ্বরের পদসেবায় নিযুক্ত।

হ্যাঁ আমি অপরাধী, আমি শয়তানের প্রাণকেন্দ্রের পূজারী।

কিন্তু তোমদের ওই বিষ।

সেই বিষে, আমি আমার সচেতনতা হারিয়েছি।

হারিয়েছি অপরাধ বোধ।

জানিনা, যে আমি নিজেই এক মস্ত শয়তান।


কোথায় সেই গুটি কয় মানুষ, যারা বিষের জ্বালা সহ্য করেও বেঁচেগেছে?

এক্সপোনেন্সিয়াল হারে বিস্তৃত হচ্ছে ঈশ্বরের সাম্রাজ্য।

ওই সামান্য কি পারবে, আমাদের মত অসংখ শয়তানের মাঝে মনুষ্যত্বকে টিকিয়ে রাখতে?

ওই সামান্য কি পারবে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে আমাদের অপরাধ?

ওরা কি পারবে, সেই সচেতনতাকে ফিরিয়ে আনতে,

যা ধর্মের পদতলে হারিয়েগেছে?


স্কলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ব মেদিনীপুর



0 comments

Recent Posts

See All
bottom of page