top of page

তিমি শিকার

-- সংগীতা সাহা



তিমি মাছ খাওয়া কিন্তু বারণ। অন্তত বারণ না হোক আমরা বাঙালিরা ভেতো (পড়ুন মেছো বাঙালি) হলেও তিমি মাছের ঝোল আমরা খেয়েছি এমন কথা সচরাচর শোনা যায় না। অবশ্য তিনি মাছ শিকার হয় অনেক উন্নত উন্নত দেশগুলোতে। উন্নত দেশে হয় কারণ ওতো বড় মাছ শিকার করতে গেলেও যে পরিমাণ আধুনিক যন্ত্রপাতি লাগে আর তার সঙ্গে যে পরিমাণ সাহস এবং শক্তি; উত্তাল সমুদ্রে গিয়ে লাফালাফি করে অতিকায় এবং স্থূলকায় তিমি মাছ কে মারার জন্য যে পরিমাণ উদ্যম লাগে শুটকি মাছ আর ইলিশ মাছ প্রিয় বাঙালির পক্ষে তা সম্ভব কিনা দেখতে হবে। ফলে তিমি মাছ আমরা খাইনা।

তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন তিনি মাছ নিয়ে এত কথা বাড়াচ্ছে কেনো। আসলে তিনি যে শুধু একটা বিশাল বড় ভীষণাকায় ভয়ঙ্কর শিকারি মাছ তা নয়। না না, মানে সেটা তো বটেই তারও সঙ্গে ওর অনেক গুরুত্ব আছে।


১৮৪৬ সাল থেকে তিমি শিকার শুরু হয়েছিল। তিমি শিকার করা হতো কারণ তিনি মারলে বিশাল একটা জনসংখ্যাকে মাছে ভাতে থুরি মাছে পাউরুটিতে খাইয়ে দেওয়া যেত। তার সঙ্গে তিমি মাছের চামড়া দিয়ে শক্তপোক্ত জিনিসপত্র তৈরি হতো,এখনো হয়, তারপর তিমির ইন্টেসটাইন থেকে সুগন্ধি দ্রব্য তৈরি হয় (বুঝুন অবস্থা সুগন্ধি দ্রব্য তাও নাকি আবার তিমির খাদ্য পাচনকারি অঙ্গ থেকে!) , সে না হয় হলো এছাড়াও তিমির দেহ থেকে যে তেল পাওয়া যেত তা দিয়ে সেকালের মানে আঠারোশো সালের ইউরোপের ঘরবাড়িতে বাতি জ্বলত। হ্যাঁ ওটা ইউরোপের বাড়ি নিশ্চিত কারণ আঠারোশো সালে এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থা ইউরোপের হাতে পড়ে তথৈবচ ছিল আর তাদের লোকজনের বাড়িতে বাতি জ্বলার জন্য তিমি মাছের তেল ব্যবহৃত হতো না এটা নিশ্চিত। সে যাই হোক এত যে গুণ তিমির সেই তিমিকে শিকার করতে মানুষজন বেরিয়ে পরতো আর প্রচুর পরিমাণে তিমি মারার পরে নিয়ে এসে নানান কাজে লাগাত।

পরে ১৯৮৬ সালে তিমি শিকার নিষিদ্ধ হয় যদিও এখনো কোথাও কোথাও চলছে। এখন তিমি শিকার যে বন্ধ হল এটা কেন হল এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন ১৮৪৬ সালে তিমি শিকার শুরু না হলে আমাদের পৃথিবীতে নাকি কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ প্রত্যেক বছর ১ লক্ষ ৬০ হাজার টন করে কম হতো। তিমি কার্বণ-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে না বটে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে সে অক্সিজেন টাই নেয়, কিন্তু তিমি জলে বসবাসের ফলে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে ফলস্বরূপ প্লাংকটন সংখ্যা বাড়ে এই প্লাংকটন বাতাসে অক্সিজেন বাড়ায় আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমায়। তিমি মাছ নিজেও তার দেহ কাঠামোর মধ্যে হাড়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা করে নিয়ে মৃত্যুর পর সমুদ্রের তলদেশে সলিল সমাধি ঘটায়। তিমি মাছের বর্জ্য পদার্থ জলের মধ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান নাইট্রোজেন কার্বন সহ অন্যান্য মৌল উপাদান গুলির যোগান দেয় ফলে বিজ্ঞানীরা তিমি মাছের বর্জ্য পদার্থ নিয়ে খুব উৎসাহী। আর এই তিমি মাছ সমুদ্রের জলের ইকোসিস্টেমের খাদ্য খাদ্ক তালিকায় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে তাদের সংখ্যা কমে গেলে পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তিমি মাছ খাওয়া থেকে শুরু করে জুতোর সুকতলা হিসেবে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে।

আমার এ লেখা বাঙ্গালীদের দোষারোপ করার জন্য নয়; কারণ আমরা বাঙালিরা পাতে শুটকি মাছ থেকে শুরু করে ইলিশ চিংড়ি রুই কাতলা যা খুশি তাই খেতে পারি তা বলে তিমি মাছের পেটি খাওয়ার আবদার করি না। এ লেখা আমাদের সকলের তিমি মাছের উপযোগিতা সেই সঙ্গে বৃহত্তর অর্থে মানুষ ছাড়াও পরিবেশের অন্যান্য জীব জন্তুর গুরুত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য লিখিত।

তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট ও গুগল বাবাজি।

0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page