top of page

সৎকার-শ্রাদ্ধ বনাম দেহদান: প্রসঙ্গ যৌক্তিকতা


- দেবস্মিতা


এইটুকু তো জীবন। চির অনিশ্চিত। কথায় আছে, আমরা মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি। জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা রবে! অথচ এই মাঝের সময়টুকু জুড়েই যত হল্লাহাটি। ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ। সেই নিয়ে ব্যবসা করে চলে 'পুরোহিত' নামধারী একদল ব্যবসায়ী। বেঁচে থাকাকালীন ধর্মের পরকাষ্ঠায় মানুষকে ফাঁসিয়েই স্বস্তি নেই তাদের, মৃত্যুর পরেও জারি থাকে সে পরোয়ানা। জীবিত অবস্থায় ভগবান নামক এক পুতুলকে জ্যান্ত দেখিয়ে তার সেবা শুশ্রূষার মাধ্যমে লুঠ করা হয় সাধারণ মানুষের অর্থ। তার জন্য আছে হরেকরকম ফন্দি ফিকির। সারাজীবন ধরে 'পরকাল' নামক এক জুজুর ভয় দেখিয়ে চলে ব্রাহ্মণ সমাজ। ধর্মভীরু মানুষ বোকার মত মেনেও নেন সেসব। এ তো গেল জীবিত অবস্থার হুমকি। মৃত্যুর পরও রেহাই নেই কিন্তু। যখন কেউ মারা যাচ্ছে তখন তার পরিবারের ওপর দায় পড়ে সেই মৃত মানুষটিকে 'স্বর্গ' নামক এক ভ্রান্ত জায়গায় বসবাস করানোর। আর তার জন্য দরকার নাকি অনেক নিয়মের থুড়ি বেনিয়মের। যার গালভরা নাম 'পারলৌকিক ক্রিয়া'। এর লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষকে বোকা বানিয়ে আরও কিছু মোটা অঙ্কের টাকা পকেটস্থ করা। মৃত মানুষ যাবেন নাকি স্বর্গে তাই তার জন্য খাবার দাবার, বিছানাপত্র, বাসনপত্র, পোশাক সমস্ত কিছু গুছিয়ে দিতে হবে। ধর্ম অনুযায়ী মানুষ নাকি এই মৃত্যুর পরবর্তী এই কয়েকদিন পৃথিবীতেই থাকে আর তারপর ব্রাহ্মণ নামক মধ্যস্থতাকারী আরও ভালো ভাষায় বললে দালালের সহায়তায় ঐসকল জিনিসপত্র সহযোগে স্বর্গবাসী হয়। যেদিন এসব হয় সেদিনকে বলা হয় মৃত মানুষটির 'শ্রাদ্ধ'। আবার বেশ কিছু ব্রাহ্মণকে ভোজনও করানো হয় দক্ষিণা সহযোগে। সবচেয়ে যেটা হাস্যকর বাড়ির লোক মৃত মানুষের জন্য যেসব জিনিস দিলে তা গিয়ে শোভা পাচ্ছে ব্রাহ্মণদের ভিটেতে, কখনও তা দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে ব্রাক্ষণরা। তবে কি স্বর্গের ঠিকানা!?

এইসব নাটক শুরু হয় মানুষ মারা যাবার পরমুহূর্ত থেকেই। প্রথমে হয় তাকে পোড়ানো বা মুখে আগুন দেওয়া। এসব না করলে 'আত্মা' নামধারী একটি বস্তু যা নাকি মানুষের জীবিত শরীরে বিদ্যমান তার মুক্তি ঘটবে না। সে কুকুর, বিড়াল কিংবা কীট রূপে জন্ম নেবে পুনরায়। আর এই মুখে আগুন দিলে (যার পোশাকি নাম সৎকার) মৃতের আত্মার মুক্তি মিলবে। এ হচ্ছে মৃতের শরীরকে নিয়ে গল্প বানানোর প্রথম ধাপ কিংবা ঢপ। প্রথমে মুক্তি দিয়ে শুরু তারপর তাকে স্বর্গে পাঠানোর বন্দোবস্ত করানো। কতই না লাভের ব্যবসা!


এবার প্রশ্ন হচ্ছে দুটো। এক, ধর্ম আমাদের বিপদে পড়লে বাঁচায়? করোনার পর কোনও ধর্মভীরু মানুষই আর জোর দিয়ে হ্যাঁ বলতে পারবেন না। কারণ ভগবান নিজেই করোনা থেকে বাঁচতে গৃহবন্দী। আর দুই, পরকাল ঠিক কি? কিছুই না। ব্রাহ্মণদের লোক ঠকিয়ে ব্যবসা করার এক রাস্তা। আবার প্রথম প্রশ্নে ফিরে যাই। তাহলে বিপদে পড়লে বাঁচায় কে? বিজ্ঞান। বর্তমানে হাড়ে হাড়ে সেটা টের পাওয়া যাচ্ছে। আমি, আপনি, আগামী প্রজন্ম সহ প্রতিটা মানুষ যাতে আরও বেশি সুস্থ, স্বাভাবিকভাবে লড়তে পারে সেটার দেখভাল করে বিজ্ঞান। তাই যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞান আরও উন্নত হতে পারে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে বৈকি এবং সেটা নিজেদেরই স্বার্থে। আমরা কম বেশি সকলেই জানি, মৃত্যুর পর সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে বিকল হয়ে যায় না। সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে অন্য আরেকজন মানুষ নতুন জীবন পেতে পারে আবার সেই শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করে হাতে-কলমে শেখার মাধ্যমে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পড়ুয়ারা অনেক বেশি সংখ্যক মানুষকে উন্নত জীবন দান করতে পারবে। বেশ কিছু সংস্থা আছে যারা দেহদান কিংবা অঙ্গদানের বিষয়টি দেখভাল করে। তাদের খবর দিলেই তারা সমস্ত বিষয়টির বন্দোবস্ত করে দেয়। তাছাড়া বেশিরভাগ শ্মশানেই দেখা যায় বি. আর. আম্বেদকরের দেহদান ও চক্ষুদান কেন্দ্র রয়েছে। এই মানুষটি সমাজের শ্রেনিবৈষম্য দূর করে বিজ্ঞানের পথে মানুষকে হাঁটাতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু মানুষ বুঝলে তো! আজও অদ্ভুতভাবে শ্মশানে সেই সংস্থাগুলোর দফতর থাকে তালা দেওয়া। আর অন্যদিকে সেখানে পুরোহিতের মন্ত্রচ্চারণ, জাঁকজমক, ধোঁয়া সহযোগে মৃতদেহের 'সৎকার' থুড়ি ধর্মব্যবসা চলছে জোরকদমে। সমানতালে হচ্ছে পরিবেশদূষণও। কী না পরকালে পাঠানোর ব্যবস্থা! যার কোনও অস্তিত্বই নেই।

এবার ভাবুন, ব্রাহ্মণ্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে মূর্খের মত এক শ্রেণীর মানুষের পকেট ফুলে ফেঁপে উঠতে সাহায্য করবেন নাকি বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে সামিল হবেন??


দেবস্মিতা

ইমেইল- rationalistsmita@gmail.com

0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page