-শ্রীকুমার মন্ডল
রিহানা- আমরা কেন ভারতবর্ষের কৃষক আন্দোলন নিয়ে কথা বলছি না ?
দেশভক্ত- বাইরের লোকজন দর্শক হতে পারে কিন্তু অংশগ্রহণকারী নয়। একমাত্র ভারতবাসীরাই ভারতবর্ষকে চেনে এবং তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। #IndiaTogether
A- ঠাকুর ঘরে কে রে?
B- আমি তো কলা খাইনি রে।
এক মহিলার ভারতের তামাম মেরুদন্ডহীন সেলেব, যারা এতদিন লুকিয়ে ছিল, তাদের প্রকৃত মুখোশ খুলে দিল। সমস্ত দেশপ্রেমিকরা, যারা এতদিনের আন্দোলন, কৃষক মৃত্যু, ফ্যাসিজম এর অত্যাচার দেখেও চুপ করে ছিল, আজ তাদের ন্যাকা দেশপ্রেমানুভূতির পেছনে আগুন লাগিয়ে দিলো।
তার নাম রিহানা। কেন কি এমন করল এই মহিলা? এত চাপানউতরণ চলছে কেন রিহানার টুইট ঘিরে? রিহানা কি টুইট করল, নাকি কীটনাশক ছিটিয়ে দিলো যে, পোকা মাকড় গুলো কিলবিল করে বেরিয়ে আসছে?
কি এমন হলো যে আজকে হঠাৎ এত এত ভারতীয় দেশ ভক্ত সেলিব্রিটি আর এন্টারটেইনারদের দেশভক্তি উগরে উগরে বেরিয়ে আসছে? সবাই এত হ্যাজট্যাগ ইন্ডিয়া টুগেদার এগেইনস্ট প্রোপাগান্ডা নিয়ে পড়ল কেন, দেশ কি ভেঙে যাচ্ছে?
আসলে কারা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, এবং কাদের বিরুদ্ধে? আসুন আসল ব্যাপারটা যে কি, সেটা বুঝে নেই, তারপর এর পেছনে সাইন্সটাকে বুঝবো।
তা এটাকে বুঝতে গেলে আগে একটা হাইপোথেটিক্যাল পরিস্থিতি বর্ননা করি। ধরুন একটা দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ বা ডিভোর্স খুব বেশি হয়। এর কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের অভাব। তাই সরকার তখন দায়িত্ব নিল যে ছোট বয়েস থেকে ওই দেশের শিশু দের প্রেম শেখানো হবে। তার জন্য নেওয়া হল এক অভিনব পদক্ষেপ। এক টেডি পুতুল দিয়ে, শিশুদেরকে ওই পুতুলের কেয়ার নেওয়ার টাস্ক দেওয়া হয়, এবং সেই টাস্ক কমপ্লিট করলে বছরের শেষে মার্ক্সসিট পাওয়া হয়।
টাস্ক গুলো খানিকটা এরকম, ওই টেডি কে খাওয়ানো, স্নান করানো, কাপড় পরানো ইত্যাদি ফটো তুলে ভিডিও করে, ইনস্টিটিউশন এর কাছে সাবমিট করতে হবে। আর ইনস্টিটিউশন সেই কেয়ার করার ফটো আর ভিডিও গুলো দেখে জাজ করবে আর নম্বর দেবে। সঙ্গে বড় বড় সেলিব্রিটিদের দিয়ে টেডি প্রেমের গান আর সিনেমা বছরে অন্তত একটা করে বেরোবে। টেডি দেখলে স্যালুট ঢুকতে হবে। টেডি প্রেমের গান চললে উঠে দাঁড়াতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তা এই পদ্ধতি চলতে থাকলো, টেডিপ্রেমের ট্রেনিং, সেইসব শিশুরা একদিন বড় হল, একদম ট্রেইন্ড এন্ড প্রফেশনাল প্রেমিক, প্রেমিকা সবাই। চলতে চলতে দেখা গেল বড় হয়ে ওরা প্রেম বলতে টেডি কে কেয়ার করা বুঝলো, মানুষকে ভালোবসতে ভুলে গেল। কিন্তু এতে রাষ্ট্রের শাসক দের বেশ সুবিধা হলো, ওরা নাগরিকদের এক একটা টেডি ধরিয়ে দিয়ে নিজেরা দুর্নীতি করতে পারে, নিজেদের স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে পারে, এদিকে ট্রেইন্ড টেডি প্রেমী নাগরিকরা টেডি কেয়ার করতে ব্যস্ত। রাষ্ট্রের অবস্থা, সমাজ-অর্থনীতি এমনকি মানুষকে পর্যন্ত ভুলে গেছে ট্রেইন্ড প্রফেশনাল প্রেমিকরা। ওরা দেশ বলতে বোঝে টেডি, দেশ প্রেম বলতে বোঝে টেডি প্রেম।
কি, কিছু রিলেট করতে পারছেন? হ্যাঁ, আমাদের ছোটো থেকে দেশপ্রেমের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। অনেকটা এই ভাবে যে জাতীয় সঙ্গীত চললে সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে। পতাকা দেখলে স্যালুট জানাতে হবে, না জানলেই দেশদ্রোহী। সেনা, আধা সেনা আর পুলিশ, যারা রাষ্ট্রের ভাড়া করা মারনযন্ত্র তাদের দেখলেই সম্মান জানাতে হবে। দেশের পপুলার সেলিব্রিটি আর এন্টারটেইনারদের কাছে দেশপ্রেম শিখতে হবে। তাদেরকে আইডল বানাতে হবে, তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলো করতে হবে। ওরা যা বলবে সেটাকেই ধ্রুব সত্য বলে মনে করতে হবে, সেটা না হলেই দেশদ্রোহী বা বামপন্থী বলে দাগানো হবে। বছরে অন্তত একটা করে হলেও দেশপ্রেম মূলক গান আর সিনেমা বানিয়ে দেশপ্রেমের ট্রেনিং দেওয়া বেসরকারি আর্টিস্ট দের জন্যও বাধ্যতা মূলক। এবং আমরা এটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে করেছি, কারণ আমাদের ছোটো বেলা থেকে সেই ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই ট্রেইন্ড প্রেমিক, যারা দেশপ্রেম বলতে বোঝে পতাকা প্রেম, জাতীয় সঙ্গীত প্রেম, দেশীয় সেলিব্রিটি প্রেম, দেশের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এমনকি আমরা মানুষকেও ভুলে গেছি। যেখানে দেশ বলতে কোনো ম্যাপ নয়, দেশ বলতে বোঝায় সেই দেশের মানুষ, সেই দেশের কৃষক আর মজুর। অথচ তারা না খেতে পেয়ে বা শিক্ষার অভাবে মারা গেলেও চলবে কিন্তু পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, সেনা আর মেরুদন্ডহীন সেলিব্রিটিদের গুরু মনে করে অন্ধ অনুসরণ করে আমাদের দেশপ্রেমের প্রমান দিয়ে যেতে হবে প্রতি সেকেন্ডে। তাই এতে সুবিধা হয় কিছু স্বার্থান্বেষী শাসকদের। তারা অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষা আর সংস্কৃতি কে ধর্ষণ করে চললেও আমরা দেখতে পাই না। এছাড়াও তাদের পদ লেহনকারি স্বার্থকেন্দ্রিক সেলিব্রিটিরা ওদেরই মালিকের বলে দেওয়া বুলি আওড়াবে, কারণ ওদের পেট চলে মালিকের পদ লেহন করেই।
কি ভাবছেন? প্রেম এক পবিত্র জিনিস যাকে এক মুক্তাঙ্গন বলে ভাবতেন? প্রেম এক স্বয়ংক্রিয় অনুভূতি যাকে ট্রেনিং দিয়ে শিখিয়ে ট্রেইন্ড দেশপ্রেমিক রোবট তৈরি করা সম্ভব নয় বলে মনে করতেন? প্রেম কোনো মেকানিক্যাল জিনিস নয় এক মানবিক অনুভূতি, যা রোবট দের দ্বারা সম্ভব নয় বলে ভাবতেন? আপনাদের কে বলে এইসব ফালতু কথা? নিজের চোখের সামনে তো দেখছেন মিলিয়ন মিলিয়ন ট্রেইন্ড দেশপ্রেমিক রোবট কে, যাদের কৃষক আন্দোলন আর কৃষক মৃত্যুতে কিছু যায় আসে না, যদিও তারাই হল প্রকৃত দেশ। কোনো পতাকা, কোনো জাতীয় সঙ্গীত, আম্বানি, আদানি, শাসক বা তাদের পদ লেহনকরি সেলিব্রিটি, ক্রিকেটাররা আসলে দেশের কিছুই নয়। অথচ তাদের পদ চুম্বন করে নিজেদের দেশ প্রেমের প্রমান দিতে তারা সদাব্যস্ত।
'মেরে ওয়াতান কে লোগো, যারা আঁখ মে ভারলো পানি'
'মেরে দেশ কি ধারতি সোনা উগলে, উগলে হিরে মোতি'
'মেরা দেশ, মেরা মূলক, মেরা এ ওয়াতান'
'দিল দিয়া হ্যা, যান ভি দেঙ্গে, এ ওয়াতন তেরে লিয়ে'
'তেরি মিট্টি মে মিল যাওয়া, গুল বানকে ম্যা খিল যাওয়া'
কি মেরে পিয়ারে দেশ বাসিওঁ!?
দেশপ্রেম দেশপ্রেম ফিল আসছে কি না? হ্যাঁ ঠিক এই ভাবে দেশপ্রেমের ট্রেনিং পেয়েছি আমরা। কটা গান আর সেলিব্রিটির নাটক দেখিয়ে, জোর করে কৃত্তিম ট্রেইন্ড প্রেমিক বানানো হয়েছে আমাদের। আমরা তাই দেশ প্রেম বলতে এগুলোকেই বুঝি। দেখলেন তো ট্রেনিং দিয়েও কৃত্তিম প্রেমিক বানানো যায়, যার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই, একদম মেকানিক প্রেমিক। ইনফ্যাক্ট আপনি নিজেও তাই। আচ্ছা ভাবুন তো, পতাকা উল্টো টাঙানো হলে আপনার কষ্ট হয় কি হয় না?
খুব কষ্ট হয় নিশ্চই? একেই বলে দেশপ্রেম, একদম টুরু লাভ।
কিন্তু দেশ যে ক্ষুধার ইনডেক্সে সবচেয়ে উপরের দিকে, দেশে কত মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যায়, তাতে কি আপনার সেই লেভেলের কষ্ট বোধ হয়?
আচ্ছা ভাবুন, দেশের এক মহান ক্রিকেটার অমুক চন্দ্রকে যখন কেউ সমালোচনা করে তখন কি ধরনের কষ্ট অনুভব করেন?
আর বেকারত্বের জ্বালায় যুবকেরা আত্মহত্যা করলে, তখনও কি একই কষ্ট হয়?
আচ্ছা রিপাবলিক ডে, স্বাধীনতা দিবস এইসব ইভেন্টে আমাদের দেশের গৌরবান্বিত সব মুহূর্ত তুলে ধরা হয়, কিন্তু গড়ে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ক্ষুধা, বেকারত্ব, ফুটপাতে শুয়ে থাকা গরিব দের তুলে ধরা হয় না কেন? মানে এগুলোও তো এই দেশেই ঘটে, না কি শুধু গৌরবান্বিত যা কিছু আছে সব এই দেশে ঘটে আর যত লজ্জাষ্কর জিনিস অর্থাৎ খুন, ধর্ষণ, অপরাধ, দুর্নীতি ওসব এদেশে ঘটে না, ভিন্ন কোনো দেশে ঘটে?
ওই ভাবে তুলে ধরার কারণও হল এগুলো ওই দেশ প্রেম এর ট্রেনিং কোর্স এর মধ্যে পড়ে। যা ভালো কিছু আছে সেগুলো দেখানো হোক, খারাপ চাপিয়ে দেয়া হোক, এতে বায়াসড আবেগ নিয়ে উলঙ্গ রাজার দেশের অন্ধ অনুসারী ভেড়ার পালের মত নাগরিক হয়ে উঠবে ট্রেইন্ড মেকানিক্যাল মস্তিস্ক হীন দেশপ্রেমিক বোট।
একদম প্রিপ্ল্যানড ভেড়া পোষণ এর রাষ্ট্রীয় শোষণ পলিসি।
এই ভাবে বড় হওয়ার কারণ শুধু এই কয়েক বছরের মধ্যে নিহিত নেই। বহু বছর আগের থেকেই আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি নামক এক অলীক বস্তু গেলানো হয়, আর তার ফল আজকে বেরচ্ছে।
কি আছে এই সংস্কৃতিতে? আসুন আমরা একটু খুলে দেখার চেষ্টা করি।
এই ভারতীয় সংস্কৃতি নামক মেকি সংস্কৃতি আসলে কিছুই নয়, ভক্তিবাদ ও অন্ধ অনুসরণ ছাড়া। আচ্ছা ভক্তিবাদ কি জিনিস? আমরা সবাই নিশ্চই ছোটো বয়েস থেকে জেনে আসছি গুরুজনদের শ্রদ্ধা ও ভক্তির চোখে দেখতে হবে। গুরুজনের সঙ্গে বিতর্ক করা শোভনীয় নয়। বড় বড় মনীষীদের গলায় মালা দিয়ে শ্রদ্ধা করতে হবে, কিন্তু তাদের কোনো কোয়েশ্চেন করা যাবে না। বড়রা কথা বললে তার মাঝে কথা বলা যাবে না (তা সে তুমি তাদের থেকে যতই ঠিক বল না কেন) কোনো এক বা একাধিক সেলিব্রিটিকে ধরে তার বা তাদের পা চাঁটতে হবে। শিক্ষক দেখা মাত্র মাথা নত করে পায়ে হাত দিয়ে ভক্তি জহির করতে হবে। নেতা, মন্ত্রী হলে তো কথাই নেই। বড়রা ছোটদের তুই বলে সম্মোধন করতে পারে কিন্তু ছোটদের ক্ষেত্রে বড়দের কে সবসময় আপনি বলে সম্মোধন করতে হবে। তা এই সমস্ত নীতিশিক্ষার মূল হল আসলে কোনো প্রশ্ন না করে অন্ধ অনুসরণ করতে হবে। মেরুদন্ড ফেলে দিয়ে তেল দিতে হবে। হ্যাঁ এটাই হল ভক্তিবাদ, এটাই হল সেই মেকি ভারতীয় সংস্কৃতি যা আমাদের গেলানো হয়। এরকম শিক্ষা পেলে কোনো শিশু বড় হয়ে মেরুদন্ড হীন ভেড়ার পাল ছাড়া ভিন্ন কিছু হবে বলে মনে হয়?
ব্যাপারটা কে আরো ভালো করে বুঝতে গেলে আসুন আমরা ওই তথাকথিত ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে কোনো এক ভিন্ন অভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করে দেখি। কোনো এক অভারতীয় সংস্কৃতিতে 10 বছরের এক ছোট্ট শিশুকেও এক পারসন বা ব্যক্তি বলে বিবেচনা করা হয়, তার মতামত কে গুরুত্ব দেওয়া হয়, প্রশ্ন করার অধিকার দেওয়া হয়, ঠিক এক 55 বছর বয়স্ক পরিণত ব্যক্তির মতো। এতে ওই শিশুটি খুব ছোটো বয়েস থেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব, নিজের মতামত, নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়।
এখানে তুই, তুমি, আপনি বলে কিছু নেই, এখানে ছোটো থেকে বড় সবাইকে you বলে সম্মোধন করা হয়, অর্থাৎ সবাই সমান। এখানে ছোটদের "ওয় পাঁচু, এখানে কি করছিস, মারবো দেখবি" টাইপের সম্মোধন করা হয় না। এখানে বলা হয় "মিস্টার পাঁচু গোপাল ইউ আর রিকুয়েস্টেড টু স্টেপ এসাইড"। ঠিক যেমন 55 বছর বয়স্ক পড়ার সম্ভ্রান্ত রবি কাকুকে বলা হয়।
তাহলে এই সংস্কৃতির শিশু, যে সাম্য দেখে বড় হচ্ছে সে সাম্যতা শিখবে না ওই ভারতীয় সংস্কৃতির শিশু যে জন্ম থেকে ডিসক্রিমিনেসন আর হেট্রেট দেখে বড় হয়েছে সে সাম্য বাদি হবে?
ভালো খারাপ কে বুঝবে, প্রশ্ন করতে কে শিখবে?
যে ছোটোবেলা থেকে মতামত রাখার সুযোগ পেয়েছে এবং তাতে অভ্যস্ত হয়েছে না কি যার মতামত ছোটো বেলা থেকে পরিবার তন্ত্র আর রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা দাবিয়ে রাখতে শেখানো হয়েছে?
চলুন এবারে আসাযাক মূল প্রসঙ্গে। প্রসঙ্গটা ছিল #Indiatogether এর প্রয়োজন পড়ল কেন? দেশটা কি ভাগ হয়ে যাচ্ছে? কোন বিদেশি শক্তির কথা বলা হচ্ছে কেন বলা হচ্ছে? বিদেশি শক্তি হঠাৎ এদেশকে ভাগ করতে এলো কেন? আদৌ কি বিদেশি শক্তি এলো নাকি সর্ষের মধ্যে ইয়ে মানে দেশের মধ্যেই দালাল ইয়ে মানে ভূত আছে?
তার জন্য দেখে নেই সমাজ বিজ্ঞান কি বলে। আমরা সমাজ বিজ্ঞানে তিনটা শ্রেণীর মানুষের কথা জানবো।
১. কনজারভেটিভ; এরা হচ্ছে শাসক ও ক্ষমতা লোভী শ্রেণী। এরা সবসময় কনজারভেটিভ এরা সমাজের মৌলিক পরিবর্তন চায় না, কারণ সমাজে মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন এলেই ওদের হাত থেকে ক্ষমতার রাস ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় আছে।
২. লিবেরাল; এই শ্রেণিটার কথা ভালো করে পড়বেন, কারণ যত গন্ডগোলের মূল এরাই। এরা হচ্ছে এলিট গ্রূপ যারা শাসকের প্রিয় স্থানীয় শ্রেণী। শাসক ও ক্ষমতার পা চেঁটে নিজেদের যে টুকু সুবিধে করে নিয়ে পেট চালানো যায়, এরা তাতেই সন্তুষ্ট। সাধারণত বড় বড় সেলিব্রিটি থেকে শুরুকরে উচ্চমধ্যবিত্ত এই দালাল শ্রেণীর মধ্যে পড়ে।
৩. র্যাডিক্যাল; নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এরাই আসলে সমাজের মুলগত বা ভিত্তিগত পরিবর্তন চায়। আসলে এরাই হল প্রকৃত পক্ষে ক্ষমতা লোভী আর ক্ষমতার পা চাঁটা দের শোষনের শিকার। এবং এই ভুক্তভোগীদের সংখ্যা তিনটে শ্রেণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এরা হল আসলে মজুর আর কৃষক শ্রেণী। এরা বিদ্রোহ চায়, আন্দোলন চায়, বিপ্লব চায়, নবজাগরণ চায় কারণ এরা শোষিত, নিপীড়িত। সংখ্যায় বেশি হয়েও খুব কম সম্পদের অধিকারী আর বেশিরভাগ সম্পত্তি ওই ওপরের দুটি শ্রেণীর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে ওদের পকেটে যায়।
দেশ বলতে বোঝায় আসলে র্যাডিক্যাল শ্রেণীর লোকেদেরকে, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শোষিত হয়ে দেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু দিনের শেষে ওরাই বঞ্চিত থাকে।
ওদের বঞ্চনা, ওদের কষ্ট যখন শাসক তথা শোষক শ্রেণী দেখেও না দেখার ভান করে তখন এরা গড়ে তোলে প্রতিবাদ আর বিদ্রোহ। ঠিক যেমন আজকের এই কৃষক বিদ্রোহ চলছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অধিকার সবার আছে, তা সে আমেরিকান হোক কিংবা আফ্রিকান, এদেশীয় হোক কিংবা মঙ্গল গ্রহের। হিউম্যান রাইট বা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে যারা প্রতিবাদ করে তারাই মানুষ, আসলে তাদের মধ্যেই মনুষ্যত্ব আছে। তাই সেই মনুষত্বের কারণেই রিহানা, এমান্ডা, গ্রেটারা টুইট করেছিল, কোনো দেশ কে ভাঙতে নয়। তাহলে দেশ ভাঙার গল্প এলো কেন? প্রোপাগান্ডা আসলে কে ছড়াচ্ছে?
সেই অসহায় শোষিত কৃষক দের আন্দোলন আর মৃত্যুর পরেও যে সব মেরুদন্ড হীন, মনুষত্ব হীন মানুষ রূপী জীব গুলো সেই অসহায় কৃষকদেরই ফলানো ফসল খেয়ে মনের আনন্দে হেগে যাচ্ছিল। টুঁ শব্দটি বের করেনি। আজ সেই সব সেলিব্রিটিরা নাকি আমাদের শেখাবে দেশ সম্পর্কে, তারাই বলে দেবে দেশকে কিভাবে একত্রিত হতে হবে(#IndiaTogether)। তাদের নিজেদের তো মনুষত্ব নেই, কিন্তু যাদের মনুষত্ব আছে, অর্থাৎ যারা এই বিষয়ে মতামত জানাচ্ছে, মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলছে, তাদের বিরুদ্ধেই এরা হাত পা ধুয়ে নানান অপ্রাসঙ্গিক ও ভ্রান্ত অপবাদ দিয়ে ভুল প্রমান করার চেষ্টা করছে।
এবার বলুন তো এরা কোন শ্রেণীর?
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, এরা হল সেই মেরুদন্ড হীন পা চাঁটা শ্রেণী, অর্থাৎ লিবেরাল। এরা সেই সমস্ত বড় বড় সেলিব্রিটি, যারা ক্ষমতার পা চেঁটে নিজেদের পেট চালায়, নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে। এরা নিজেদের ফেম কে ক্যাপিটেলাইজ করে ওই প্রভুদের কাছে কোটি কোটি কামায় আর ফেম ধরে রাখার জন্য সমস্ত শ্রেণীর গায়ে হাত বুলিয়ে যায়। এরা নির্লজ্জ, এরা জাতির উন্নয়নে ভূমিকা তো রাখেই না, বরং জাতির ক্ষতি করে। এরা মানব সভ্যতার কলঙ্ক, এরা মানব জাতির জন্য যন্ত্রণাময় দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা।
এর পরে বাকি কাজ তো আমাদের আছেই। আমরা ভক্ত সংস্কৃতিতে বড় হওয়ার কারণে আমাদেরও কোনো একটা idol চাই পুজো করার জন্য, সেই সুযোগ নিয়ে ওরা নিজেদের পা বাড়িয়ে দেয় আমাদের দ্বারা পূজিত হওয়ার জন্য। আর এই ভাবেই তারা খুব সহজেই ফেম পেয়েযায়, যেটাকে ওরা ক্যাপিটেলাইজ করে ওই ক্ষমতার প্রভুদের পা চেঁটে চেঁটে কোটি কোটি কামায়। এছাড়াও আমরা বরাবর ওই ট্রেইন্ড দেশপ্রেমিক মেশিন। নিজেদের দেশ প্রেম প্রমান করার জন্য সদা ব্যস্ত। তাই আমরা তো ওই সেলিব্রিটির কাছ থেকেই দেশ প্রেম শিখবো, বাকি যে যা বলে বলে যাক, আমি তো পতাকা উত্তোলন করে আর সেলিব্রিটিদের পুজো করে দেশপ্রেম দেখিয়ে যাবো।
Comentarios