-সায়নদীপ সরকার
ইন্ডিভিজুয়াল সেকুলারিজমের কোন অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি মানুষ নিজেকে সেকুলার বলে দাবি করতে পারে না। যদি এটা সে করে তাহলে সে আসলে ভন্ড ও মেকি। সে কোন বিশেষ সুবিধা পাওয়ার লোভে এটা করছে। একই ভাবে রাষ্ট্র তথা সংবিধানকে তাঁর রচনাকারেরা ধর্মনিরপেক্ষ আক্ষা দিয়ে থাকলে সেটা নিজের স্বার্থে দিয়েছে কারণ রাষ্ট্র বা কোন প্রতিষ্ঠান কোন জড় বস্তু নয়। দিনের শেষে এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে কিছু সংগঠিত মানুষের দল যারা মানুষের ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসছে। এখন রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার পিছনে আছে পাতি ভোটের অঙ্কের হিসেব যেটা আমরা সবাই খুব ভালো ভাবে অবগত।
এখন আসা যাক ইন্ডিভিজুয়াল সেকুলারিজমের অন্তঃসারশূন্যতায়। কোন ব্যক্তি জন্মসূত্রে তার পিতা মাতার পরিচয়ে কোন বিশেষ ধর্মের মানুষ হিসেবে পরিচিত হয়। সে না চাইলেও তাকে এটা হতে হয় কারণ না হলে বার্থ সারটিফিকেট ইস্যু হবে না এবং ভবিষ্যতে সেই ব্যক্তিকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এখন আমরা মনে করলাম সেই ব্যক্তি বড় হলো ও নিজের যুক্তি,বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে নিজেকে নাস্তিক আক্ষা দিলো। কিন্তু সে কখনোই নিজের ধর্মীয় পরিচয় ত্যাগ করতে পারবেনা কারণ তার পদবীর সাথেই তার ধর্মীয় পরিচয় লেপ্টে আছে। সে তার নাম পালটে স্পাইডারম্যান, মিঃ বিন্ বা শক্তিমান রাখতে পারবেনা। অর্থাৎ ধর্ম তার পিছু ছাড়ছে না টেকনিক্যালি কিন্তু তাও সে নিজের দার্শনিক দৃষ্টিতে নাস্তিকতা গ্রহণ করলো। এতে কোন সমস্যা নেই। কারণ পদবী পালটেও তাকে অন্য ধর্মের পরিচয় নিতে হবে যেটা সে চায়না এবং এতে তার কোন হাত নেই। এখন দর্শনের দিক দিয়ে নাস্তিক সেই ব্যক্তি যে কোন ধর্ম ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং সমস্ত ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করতে এক মুহূর্ত ভাবেনা। নাস্তিক ব্যক্তি শুধুমাত্র গণিত,বিজ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে জীবন ও প্রকৃতিকে বিচার করে।
এবার আসা যাক সেকুলারদের কথায়। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি বা সেকুলার মানুষ বলে যারা নিজেদের আক্ষা দেয় এরাই আবার ঈদের দিন মুসলিম বন্ধুকে ঈদ মুবারক, হিন্দু বন্ধুকে শুভ জন্মাষ্টমী বা শুভবিজয়া এবং 25 শে ডিসেম্বরে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে হ্যাপি খ্রিস্টমাস জানিয়ে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ শব্দের অর্থ হলো যে মানুষ কোন বিশেষ একটি ধর্মের নিয়মে নিজের জীবনকে পরিচালিত করেনা বা বিশেষ কোন ধর্মের প্রভাব নিজের জীবনে পরতে দেয়না। অথচ সে প্রতিদিন একটি বিশেষ পদবী নিয়ে চলছে যেটা একটি বিশেষ ধর্মকে রিপ্রেজেন্ট করে। যে ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ কোন ধর্মের পক্ষ নেয়না কিন্তু আবার কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেই ব্যক্তিই বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানায় এটা সেল্ফ কনট্রাডিকটরি। সেকুলার শব্দের প্রকৃত অর্থ আসলে নাস্তিকতা। তাই যে সেকুলার হয় তার উচিৎ সমস্ত ধর্ম ও সেই ধর্মের অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে দূরে রাখা ও সেই বিশেষ দিনে ঐ বন্ধুকে শুভেচ্ছা না জানানো। কিন্তু সেকুলাররা সেটা করেনা কারণ রাষ্ট্রের মতোই সেও নিজের স্বার্থে বৃহত্তর মানুষকে নিজের হাতে রাখতে চায়। একজন নাস্তিকের সাথে একজন নামধারী "সেকুলার"এর মিল হলো দুজনেই জন্মসূত্রে ধার্মিক কিন্তু তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়। নাস্তিক বুক ঠুকে বলার সাহস রাখে আমি ঈশ্বর মানিনা আমি ধর্ম ও মানিনা যেটা "সেকুলার" কখনোই বলে না। সেকুলারেরা আসলে ভন্ড ও ধান্দাবাজ।
এবার এই ইন্ডিভিজুয়াল সেকুলারিজম কে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সঠিক বলে বিবেচনা করতে গেলে নতুন একটি শব্দের অবতারণা করা যায় যেটা খুব কম লোক ব্যবহার করে থাকে- শব্দটা হলো অ্যাগনস্টিসিজম। শব্দটির অর্থ হলো অনেকটা এরকম--আমি ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করিনা আবার ঠিক বিশ্বাসটাও আসছে না কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিনা তাঁকে, অবিশ্বাস ও করছিনা কারণ এত লোক বিশ্বাস করে। এটা হোল একজন অ্যাগনস্টিক্ মানুষের দর্শন। কোন "সেকুলার" ব্যক্তিকে যদি অ্যাগনস্টিক্ বলা যায় তাহলে তার ঐ সমস্ত কার্যকলাপ নীতিগত ভাবে কিছুটা সমর্থন করা যায় ও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া চলে। কিন্তু সেকুলার হয়ে সে যদি সেকুলার শব্দের মানে জেনেও নিজেকে অ্যাগনস্টিক্ বলতে দ্বিধা করে ও প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে বেরায় তবে তাকে ধান্দাবাজ ও সুবিধাবাদী বলবো।
সুতরাং বিশ্বাস ও যুক্তির লড়াইয়ে মূলত তিনটি শ্রেণীকে মান্যতা দেওয়া যায়-
১.ধার্মিক
২.নাস্তিক
৩.অ্যাগনস্টিক্
এর বাইরে কোন শ্রেণীর অস্তিত্ব নেই। সেকুলারেরা আসলে ভন্ড। কারণ একমাত্র প্রকৃত ধার্মিক মানুষই অপর একটি ধর্মাবলম্বী মানুষকে তার পার্বনের দিনে শুভেচ্ছা জানাতে পারে। যে প্রকৃত নাস্তিক সে কখনোই ধর্মের পক্ষ নেবেনা কারণ তার কাছে যুক্তি ও বিজ্ঞান আছে, সে কখনোই কোন বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাবেনা তার বন্ধুকে। বিশ্বাসের থেকে যুক্তি তার কাছে অনেক মহান। কিন্তু একজন সেকুলার এই দুই পথের কোনটায় হাঁটে না। সে স্বার্থপর,ভন্ড ও মেকি ঠিক ঐ সাজানো গোছানো রাষ্ট্রযন্ত্রের মতই। সে আসলে অন্তঃসারশূন্য।
Comments