- রাজা দেবরায়
১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে মানে প্রেম দিবস! এই দিনটি স্পেশাল হলেও ৭ ফেব্রুয়ারি থেকেই বিভিন্ন 'ডে' বা দিবস পালন করা হয়। ৭ই ফেব্রুয়ারি রোজ ডে থেকে ১৪ই ফেব্রুয়ারি-ভ্যালেন্টাইন্স ডে অবধি
প্রথমে সাদা মনে কিছু কথা বলে নিই। কিছু 'অবান্তর' প্রশ্ন সরল মনে বা মাথায় ঘোরাফেরা করছে। যেমন-
১) ৭ই ফেব্রুয়ারি রোজ ডে'তে কি শুধুই লাল গোলাপ দিতে হবে নাকি অন্য রংয়ের গোলাপও দেওয়া যাবে?
২) ৭ই ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবস হওয়ায় ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রোপোজ ডে'তে কি আবারো গোলাপ দিয়েই প্রোপোজ করা যাবে? যদি
যায় তবে গোলাপ দিবসের তাৎপর্য কী থাকবে?
৩) ঠিক তেমনি ৯ই ফেব্রুয়ারি চকলেট ডে এবং ১০ই ফেব্রুয়ারি টেডি ডে হওয়ায় ৮ই ফেব্রুয়ারি প্রোপোজ ডে'তে ঐগুলো দিয়েই
কি প্রোপোজ করা যাবে? যদি যায় তবে চকলেট দিবস আর টেডি দিবসের গুরুত্ব কি আদৌ থাকবে?
৪) ১১ই, ১২ই এবং ১৩ই ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে প্রমিস ডে, কিস ডে এবং হাগ ডে হওয়ায় ১৪ই ফেব্রুয়ারি তাহলে কী বাকি থাকবে?
বিয়ে?
৫) তাছাড়া যেকোনো সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে 'বন্ধুত্ব'। তাই ৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ই
ফেব্রুয়ারির মধ্যে বা ৭ই ফেব্রুয়ারির আগে 'বন্ধুত্ব দিবস' থাকলে কি ভালো হতো না?
এবার একটু বহুচর্চিত তাত্ত্বিক কথা বলি। প্রেম দিবস কি শুধুই নির্দিষ্ট একদিন বা নির্দিষ্ট কয়েকদিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বা থাকে? জানি, আমরা প্রায় সবাই এর উত্তরে 'না' বলবো। তবে ভালোভাবে উদযাপন করার জন্য নির্দিষ্ট একটা দিনকে বা নির্দিষ্ট কয়েকদিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাই না? কিন্তু দুঃখের কথা হলো আমাদের সমাজে বর্তমান সময়েও প্রেম বিষয়টিকে সহজভাবে নেওয়া হয় না। রবি ঠাকুর, কাজী নজরুলের প্রেমের গান শুনলেও বা গাইলেও প্রায় বলা যায় অধিকাংশই প্রেম করতে দেখলে বা প্রেম করছে জানতে পারলে স্বাভাবিকভাবে একে স্বাগত জানানোর মানসিকতার অধিকারী হয়ে ওঠেন না। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, পাড়ায় প্রেম করতে দেখলে একজন আরেকজনকে বলেন "কি আরম্ভ করেছে দেখেছেন, পাড়ায় তো থাকাই যাবে না দেখছি। বিশ্রী ব্যাপার চলছে।" ভাবুন প্রেম করছে অন্যরা, পাড়ায় থাকতে পারছেন না উনি। অনেক সময় মনে হয় এটা কি ঈর্ষায় বলেন? নিজে করতে পারলে সব ঠিক হতো তখন? আসলে আমাদের সমাজে এখনো প্রেম উদযাপন করার কোনো উদ্যোগ বা সুযোগ নেই!
তবে বড় বড় মানুষেরাই তো বলেন "প্রেম বড় পবিত্র ব্যাপার" এই সেই! আসলে এগুলো মুখেই বলা হয় শুধু। আমাদের সিস্টেমে একটা লোক ঘুষ খেলে যতটা না সমালোচনা করা হয়, প্রেম করলে তার থেকে অনেক বেশি করা হয়। এককথায় বলে দেওয়া হয় "লোকটার চরিত্রের ঠিক নেই।" চরিত্রের বাস কোথায় তাহলে? পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে বা গোপন জায়গায় প্রেম করতে হয় কেনো ছেলেমেয়েদের? প্রেম যদি সত্যিই পবিত্র হয়ে থাকে তবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেনো প্রেম করতে হয়? কারণ, প্রেম মানে 'পাপ' বা 'অপরাধ'? প্রেম করলেই 'দোষী'? কিন্তু মজার বিষয় হলো এত অপবাদ সত্ত্বেও প্রেম চিরকালীনই অমর ছিল, আছে এবং থাকবে!
নিজেরা প্রেম করে বিয়ে করেছেন, এমনকি হয়তো পালিয়েও বিয়ে করেছেন, কিন্তু তারপরেও দেখা যায় বা যাবে প্রেমের ব্যাপারে অ্যালার্জি! তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কিছুটা সতর্কতামূলক ব্যাপার অবশ্যই থাকা উচিত। তার জন্য হয়তো সন্তানদেরকে সম্মানিত অভিভাবকদের বলা উচিত, প্রেম করলে বাড়িতেই সবার সামনে করা ভালো! তাতে অন্তত কিছুটা হলেও অহেতুক ভয় কাটবে এবং সতর্কতাও বজায় থাকবে! তবে প্রেম করাকে অপরাধের সামিল করাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সবথেকে বড় কথা, প্রেম তো বলে কয়ে বা ডেকে আসে না, দিন-তারিখ দেখেও আসে না। প্রেম হয়ে যায়! কখন প্রেম আমাদের জীবনে আসবে সেটা হয়তো আমরাও বলতে পারবো না! আর প্রেম যে শুধুমাত্র একজনের সাথেই হবে বা সারাজীবন একজনের সাথেই থাকবে সেই গ্যারান্টি কে দিতে পারে?
এবার একটু বুদ্ধিদীপ্ত কথায় যাই। শুরুতে যে 'অবান্তর' প্রশ্নগুলো মাথায় এসেছিলো, সেগুলোর আসলে প্রাসঙ্গিকতা আছে। এই যে বিভিন্ন 'ডে' আজকাল আমরা দেখছি, এগুলোর পেছনে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হলো মূল কথা। আসল কথা আমাদের ইমোশন বা আবেগকে পুঁজি করে গিফ্ট কেনাতে উৎসাহী করা হয় বা অন্যভাবে ভাবলে বাধ্য করা হয়! 'গিফ্ট' হচ্ছে মুখ্য বিষয়! আবার কী গিফ্ট দিতে হবে বা কী ধরনের ফুল দিতে হবে সেটারও মোটামুটি একটা ধারণা স্থির করে দেওয়া হয়েছে। যেমন- দামী চকলেট, লাল গোলাপ, টেডি বিয়ার ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক, তত্ত্বকথা বা বুদ্ধিদীপ্ত বাক্যালাপকে মাথায় রেখেই আসুন আমরা প্রেম দিবসের এই কয়েকদিন প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে রবি ঠাকুরের গান গাই- “আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো।’’
Comments