top of page

চলো যাই ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র বাড়ি


-সন্তোষ শর্মা

যে কোন ধরণের ভাঙ্গা হাড় জুড়ে দেওয়ার দৈব-চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরে ঘোষপুরের চারাবটতলা। শ্রীমতী লক্ষ্মী মণ্ডলের নাম ঐ অঞ্চলে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’ নামে প্রসিদ্ধ। ইনি যে কোন ভাঙ্গা হাড় শুধুমাত্র দৈব-চিকিৎসার মাধ্যমে জুড়ে দিয়ে থাকনে। এই খবর কানে আসার পর আমরা ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ঘোষ-এর নেতৃতে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র দৈব-চিকিৎসার বুজরুকি ফাঁস করার জন্য একটি প্ল্যান তৈরি করলাম।


শনিবার ২৮ অক্টোবর ২০০৬

সকালে আমাকে নিজের বাঁ হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধতে দেখে ছোট বোন শান্তি জিজ্ঞেস করল, “সন্তোষদা হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ বাঁধছো কেন?”

বললাম, “হাতে ছোট লেগেছে। ব্যাথা করছে। ডাক্তারের কাছে যাবো বলে ব্যান্ডেজ বাঁধছি। ”

একটু পরে প্রবীর বাবু ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, “যেভাবে বলেছিলাম, সেইভাবে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেছ? চুলদাড়ি কাটনি তো?”

আমি বললাম, “আপনার প্ল্যান মাফিক কাজ করছি। ”

তিনি বললেন, “শোন, কলকাতার মানিকতলা থেকে শংকর ভড়ও তোমার সঙ্গে যাবে। কিন্তু তোমার দু’জনে আলাদ-আলাদভাবে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র বাড়িতে যাবে। এমনভাবে থাকেব, দেখে মনে হবে, তোমরা একে-অপরকে চেন না। ঠিক করে যাবে। যদি কোনও ধরণের বিপদ হলে সঙ্গে-সঙ্গে আমাকে ফোনে খবর দেবে। ”

বাঁ হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে, একটি মোটা সুতোর সঙ্গে হাত গলায় ঝুলিয়ে নিলাম। এই অবস্থায় আমি বাড়ির কাছের বাসস্টপ কুন্ডুবাড়ি থেকে বাসে ধরে প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত রেল স্টেশনে পৌছালাম। সেখান থেকে বনগাঁও লোকাল ট্রেন ধরে মছলন্দপুর স্টেশনে নামলাম। স্টেশনের বাইরে বেড়িয়ে দেখি ভ্যান চালকেরা হাঁক পারছে, “কেউ কি ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র বাড়িতে যাবেন। ”

কয়েকজন একসাথে ভ্যানে উঠে পরলাম। সহযাত্রীদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম, এঁরাও দৈব চিকিৎসার জন্য ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র কাছে যাচ্ছেন।

প্রায় ১০ মিনিট পর ঘোষপুরের চারাবটতলায় অবস্থিত ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র কাছে নামলাম। ভাড়া নেওয়ার সময় ভ্যান চালক বললেন, “ বুড়ি’মার কাছে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার জন্য সরসে তেল ও কালো সুতো নিয়ে যাবেন। ”

বললাম, “আমি তো এই জিনিস তো আনিনি। তাহলে কি হবে?”


ভ্যান চালক বললেন, “চিন্তা করবেন না বাবু। ঐ যে ছোট্ট মুদির দোকান দেখতে পারছেন। ওখানেই তেল-সুত পাওয়া যায়। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। চার টাকা দিন আমি নিজেই কিনে এনে দিচ্ছি। ”


১০ টাকার একটি নোট বের করে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ফিরে এসে আমার হাতে একটা ছোট তেলের শিশি এবং একহাত লম্বা কালো সুতো দিলেন।

মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল একটি কুঁড়েঘর। বাড়ির সামনে উঠেন প্রায় ৫০০ লোকের ভিড়। কেউ বাঁ ভ্যানে করে, কেউ বাঁ কোলে চড়ে, কেউ লাঠিতে ভর করে এসেছেন। একজন যুবক এগিয়ে এসে বলল, “আপনি কি ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’ মার কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছেন?”

বললাম, “হ্যাঁ, বাঁ হাতে সমস্যা। ”

‘সরিষা তেলের শিশি এনেছেন কি?’ সে জিজ্ঞেস করল।

বললাম -হ্যাঁ, নিয়ে এসেছি।

যুবকটি বলল, “ঐ যে তেলের শিশির লাইন দেখছেন। ঐ লাইনে আপনার শিশিটি রেখে দিন। আপনাকে কষ্ট করে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ”

একটু পরে শংকরদা এলেন। তিনিও সরিষা তেলের শিশি লাইনে রেখে এক কোনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। দেখি তাঁর ডান পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা।

এদিকে সূর্য মাথার উপরে উঠে গেছে। রুগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। শিশির লাইন একটু-একটু করে বুড়ি’মার ঘরের দিকে এগোচ্ছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আমার শিশি বুড়িমার সামনে পৌছাল। দেখলাম, প্রায় ৬০ বছর বয়স্ক এক মহিলা। তাঁর মাথায় সাড়ির আঁচাল দেওয়া। তাহলে ইনিই ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’। আসল নাম লক্ষ্মী মণ্ডল। কিন্তু ঐ অঞ্চলে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’ নামে প্রসিদ্ধ। ইনি হাড় ভাঙ্গার দৈব চিকিৎসা করে থাকেন। আমি এগিয়ে গিয়ে বুড়ি’মার সামনে উবু হয়ে বসলাম। বুড়ি’মা জিজ্ঞেস করলেন, “কি সমস্যা?”

আমি বললাম, “সাইকেল থেকে পরে বাঁ হাতে চোট পেয়েছি। এক্স-রে করিয়ে দেখেছি, হাড়ে চির ধরেছে। প্রচন্ড ব্যাথা। লোকমুখে শুনেছি, আপনি দৈব ক্ষমতায় ভাঙ্গা হাড় জুড়ে দেন। তাই চিকিৎসার আশায় হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে এতদূরে ছুটে এলাম। ”

আমার বাঁ হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে বুড়ি’মা বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়লেন। হাতে তিন বার ফুঁ দিলেন। ছোট তেলের শিশির ঢাকনা খুলে তাতে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলেন। শিশি থেকে একটু তেল নিয়ে আমার বাঁ হাতে মালিশ করলেন। এরপর আমার গলায় একটা কালো সুতোয় একটা শিকড় বেঁধে পড়িয়ে দেন। এবং বাকি সুতটি একটি হেসুয়া দিয়ে কেটে দিলেন।

আমরা হাতে তেলের শিশিটি দিয়ে বুড়ি’মা বললেন, “এটা মত্রপুত তেল। এই তেল দিয়ে মালিশ করবেন। গরম সেঁক দেবেন। ”

আমি বললাম, “হাতে প্রচণ্ড ব্যাথা। ব্যাথার ওষুধ খাচ্ছি। এই তেল ও শেকড় দিয়ে আমরা হাত ঠিক হয়ে যাবে তো?”

বুড়ি’মা মাথা নাড়িয়ে বললেন, “আমার দৈব ওষুধ বিফলে যাবে না। এখন থেকে আর কোন ওষুধ খেতে হবে না। গলায় ঝলানো এই শিকড় সব ব্যাথা শুষে নেবে। চিন্তা করো না। ”


জিজ্ঞেস করলাম, “এই চিকিৎসার জন্য কত টাকা দিয়ে হবে। ”

“আমি এই দৈব চিকিৎসার পরিবর্তে এক টাকা নিই না। আপনার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে মায়ের দানবাক্সে কিছু দান কারুন। ” বুড়িমা বললেন।

একটি ১০ টাকার নোট দানবাক্সে ফেলে বেড়িয়ে এলাম। দৈব চিকিৎসক ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’মার বাড়িতে আজ প্রায় ৫০০ লোকের ভিড়। হিসেব করে দেখলাম, “আমার মত প্রত্যেকে যদি ১০ টাকা করে দেয়, তাহলে একদিনে বুড়ি’মার ৫০০০ টাকা আয় হবে! তাহলে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মিলিয়ে মাসে কত টাকা আয় হচ্ছে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’মা সেটা পাঠকরাই হিসেব করুন। ”

এরপর শিশির লাইনে মধ্যমে শংকরদা এগিয়ে গেলেন।

বুড়ি’মা জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে?”

বামপায়ের পায়জামাটা একটু উপরে তুলে শংকরদা বললেন, “কাল রাতে সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় পা পিছলে পড়ে যাই। এক্স-রে করিয়ে জানতে পারি হাড়ে চির ধরেছে। আমি পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে কোলকাতা থেকে আপনার কাছে দৌড়ে এসেছি মা। ”

বুড়ি’মা বললেন, “পায়ের ব্যান্ডেজ খুলে ফেলুন। ”

বুড়ি’মা বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়লেন। তিন বার ফুঁ দিলেন। শিশির ঢাকনা খুলে তাতে মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলেন। গলায় একটা কালো সুতোয় একটা শিকড় বেঁধে পড়িয়ে দিলেন। বাকি সুতাটি একটি হেসুয়া দিয়ে কেটে দিলেন।

শংকরদা হাতে শিশিটি দিয়ে বুড়িমা বললেন, “এই মন্ত্র পড়া তেল দিনে পায়ে মালিশ করবেন। গরম সেঁক দেবেন। কোন ডাক্তারের ওষুধ খেতে হবে না। হাড়ের চির জুড়ে যাবে। ”

এখনে উপস্থিত প্রত্যেক রোগীকেই ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’মা একই পদ্ধতিতে অলৌকিক চিকিৎসা করে চলেছেন।

এদিকে আমি ও শংকরদা ভ্যানে করে মছলন্দপুর স্টেশনে ফিরে এলাম। এখান থেকে সিয়ালদাহগামী ট্রেনে উঠে বসলাম। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে শিয়ালদহতে নেমে দু’জনে পায়ে হেঁটে ৩৩এ ক্রিক রো, মৌলালি, কলকাতায় অবস্থিত যুক্তিবাদী সমিতি’র স্টাডি ক্লাসে পৌছালাম।

এই স্টাডি ক্লাসে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন প্রবীর বাবু। তিনি আমার ও শংকরদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন, “আজকের আলোচনার বিষয় -চলো যাই ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র বাড়ি।

আমি বললাম, “প্রবীর বাবুর নেতৃতে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র দৈব-চিকিৎসার বুজরুকি ফাঁস করার জন্য একটি প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। তাই আমি ও শংকরদা দু’জনে নিজেকে হাড় ভাঙ্গা রোগী হিসাবে অলৌকিক চিকিৎসক ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়িমা’ অর্থাৎ লক্ষ্মী মণ্ডলকে দেখাই। আমি বাঁ হাতে এবং শংকরদা বাঁ পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে বুড়ি’মার কাছে গিয়েছিলাম। মজার বিষয় হলে, বুড়ি’মা শুধুমাত্র হাতে বা পায়ে বাঁধা ব্যান্ডেজ খুলেই তাঁর ‘দিব্যদৃষ্টি’ দিয়ে দেখে নিচ্ছেন, হাড় ভেঙ্গেছে কি না। রুগীর হাড় জোড়া দিতে এই শিশির সরষে তেল ও গলায় এই শেকড় বেঁধে দিচ্ছেন। এখন থেকে আর ডাক্তারের ওষুধ খেতে হবে না। ”



শংকরদা বললেন, “প্রবীর বাবুর প্ল্যানমাফিক বাড়ি থেকেই আমি ও সন্তোষ দু’জনে পায়ে ও হাতে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে গেছিলাম। আমাদের মুখের কথাতেই বুড়ি’মা ভাঙ্গা হাড় জোড়া দেওয়ার জন্য মন্ত্র পড়লেন, ফুঁ দিলেন। গলায় শিকড় বেঁধে দেলেন। আসলে ঐ বুড়ি’মার কাছে কোনও ‘দিব্যদৃষ্টি’ নেই। থাকলে বুঝতে পারতেন, আমাদের হাতে-পায়ের হাড়ে কোনও চির ধরেনি। পড়ে গিয়ে হাড়ে চিরটা একটি সাজানো গল্প। ”

আমাদের কাছে থেকে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র বিস্তারিত ঘটনা শুনে প্রবীর বাবু বললেন, “এই প্রতারক দৈব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। ”


বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর ২০০৬

ভাবতে অবাক লাগে আজও আনেক মানুষ ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্র, তেলপড়া, শেকড়-বাকড়, দৈব ও অলৌকিক চিকিৎসায় বিশ্বাস করে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র মতন বুজরুকের কাছে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। এই সব বুজরুকদের মুখোশ খুলে দেওয়ার জন্য আমরা যুক্তিবাদীরা সব সময় তৈরি আছি। এই বুজরুকদের শুধু মুখোশ খুলে দিলেই হবে না। চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নেই ছিনিমিনি খেলা এই বুজরুকের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানবার প্রয়োজন।

ড্রাগ এন্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০ অনুসারে, দৈব উপায়ে যে কোন রোগের চিকিৎসা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইন অনুসারে, ‘ড্রাগ লাইসেন্স’ ছাড়া যদি কেউ (‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র মত) তেলপড়া, ঝাড়ফুঁক, তন্ত্রমন্ত্র, শিকড় ইত্যাদি দিয়ে ভাঙ্গা হাড় জুড়ে দেওয়া অথবা যে কোন রোগের দৈব চিকিৎসা করার দাবি করেন তাহলে তাঁর জেল ও জরিমানা দুই হবে।

আজও এই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে সঠিক চিকিৎসা পরিসেবা মেলে না। আর্থিক এবং অন্ধবিশ্বাসে ডুবে থেকে মানুষ দৈব চিকিৎসার চক্করে পড়ে নিজের জীবনে বিপদ ডেকে আনেন। অন্য দিকে, প্রকাশ্যে বুজরুকি ব্যবসা চল্লেও পুলিশ ও প্রশাসন উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। ফলে, বুজরুকি ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। এমন অবস্থায় দায়িত্ব বাড়ে আমরা যুক্তিবাদীদের।

শেষ পর্যন্ত যুক্তিবাদী সমিতি’র নেতা শংকর ভড় একজন রুগী হিসাবে উঃ ২৪ পরগনা জেলার সুপারিটেডেন্ট অফ পুলিশ কাছে দৈব চিকিৎসক ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র অর্থাৎ শ্রীমতী লক্ষ্মী মণ্ডলের বিরুদ্ধে লিখতি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগ পত্রটি এখানে তুলে দিলাম-


মাননীয়, তারিখ–২. ১১. ২০০৬

সুপারিটেডেন্ট অফ পুলিশ

উঃ ২৪ পরগনা, বারাসাত



আমি শংকর ভড়, ১১ বি ভড়লেন, কোলকাতা-৬ –এর বাসিন্দা। আমি গত ২৮/১০/২০০৬ তারিখে বেলা ১২ তা ১০ নাগাদ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মছলন্দপুরে ঘোষপুর, চারাবটতলায় অবস্থিত শ্রীমতী লক্ষ্মী মণ্ডলের বাড়িতে যাই। শ্রীমতী লক্ষ্মী মণ্ডলের নাম ঐ অঞ্চলে হাড়ভাঙ্গা বুড়ি নামে প্রসিদ্ধ। ইনি হাড়ভাঙ্গার দৈব চিকিৎসক হিসাবে রোগীদের চিকিৎসার মাধ্যমে চিকিৎসা করে থাকেন। আমি যখন ঐ বাড়িতে প্রবেশ করি, তখন সেখানে আনুমানিক প্রায় ৫০০ (পাঁচশত) জন মত রোগী ও তাঁদের আত্মীয় স্বজনের ভিড় দেখতে পাই।

আমি নিজেকে একজন হাড়ভাঙ্গা রোগী হিসাবে অলৌকিক চিকিৎসক লক্ষ্মী মণ্ডলকে দেখাই। তখন বেলা প্রায় ১-১৫ মিনিট। তিনি আমাকে দেখেন ও আমার গলায় একটা কালো সুতোয় একটা শিকড় বেঁধে পড়িয়ে দেন ও একটা ছোট তেলের শিশিতে ফুঁ দিয়ে মন্ত্র পড়ে, ঐ মন্ত্র পড়া সরষের তেল দিনে মালিশ করবেন এবং গরম সেঁক দিতে বলেন। তিনি আমাকে আরও বলেন যে এখন থেকে আর কোন ডাক্তারের ওষুধ খেতে হবে না।

এখানে উপস্থিত প্রত্যেক রোগীকেই তিনি আমার মত একই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করছিলেন।

আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে কোন ‘ড্রাগ লাইসেন্স’ ছাড়াই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার তিনি অসংখ্য মানুষকে এইভাবে অলৌকিক চিকিৎসা করে চলেছেন, যা আইনত সম্পূর্ণ বে-আইনি।

আপনার কাছে আমি শ্রীমতী লক্ষ্মী মণ্ডলের বিরুদ্ধে ড্রাগ এন্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবেদন করছি।

আশাকরি জনস্বার্থে আপনি আমার আবেদন গ্রহণ করবেন বাধিত করবেন।

ধন্যবাদ

শংকর ভড়

কলকাতা-৬

এই অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ পদক্ষেপ নেয়। মুখ থুবড়ে পড়ে ‘হাড়ভাঙ্গা বুড়ি’র দৈব চিকিৎসার নামে বুজরুকি ব্যবসা।


সন্তোষ শর্মা

সংযুক্ত সম্পাদক

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি

কলকাতা - ১২২

মোবাইল : ৯৩৩০৪৫১৯৭৭

ইমেল : rationalist.santosh@gmail.com


0 comments

Recent Posts

See All

Comments


bottom of page