¬-ইন্দ্রানুজ রায়
সাহিত্যরসে আমি সদা বঞ্চিত, তাই শুরুতেই লেখার গুণগত মান খারাপ হওয়ার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিতে চাই পাঠকদের কাছ থেকে।
আমি যুক্তিবাদী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসি একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়, যখন আমাদের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক শ্রী পার্থ প্রতীম রায় স্যার আমাকে প্রবীর ঘোষের লেখা "অলৌকিক নয়, লৌকিক" বইটির প্রথম খন্ড পড়তে বলেন। বইটি পড়ে একাধারে আমি বিস্মিত হই আর তারই সাথে বহুদিনের অজানা প্রশ্নের উত্তর পাই। তবে একটি প্রশ্ন আমার মনে ঘুরতে থাকে, যে কেন যুক্তিবাদীদের এত সাফল্যের পরও আজ নতুন উদ্দিপনার সাথে সদগুরুর মত ভন্ড বাবাজিদের প্রতাপ বেড়েছে? কেন আমরা কয়েক দশক আগের মত মানুষকে পাশে টানতে পারছিনা? আমরা পিছিয়ে পরলাম, নাকি বাবাজিরা এগিয়ে গেল? সেই ভাবনা থেকে আসা আমার কিছু বক্তব্য আমি তুলে ধরতে চাই আপনাদের সামনে, যাতে এই বিষয় তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে আমরা নিজেদের উন্নতি করতে পারি।
প্রথম প্রশ্ন: মানুষ জ্যোতিষি, "স্পিরিচুয়াল গুরু"দের কাছে কেন যায়? কোনো ইন্সিকিউরিটি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়। সেখান থেকে ফল হোক বা না হোক, কেন আবার যায়? এটা জানার জন্যে আমি আমার "গ্রহরত্ন"ধারি সহপাঠিদের মধ্যে সার্ভে চালাই। ৫০জনকে প্রশ্ন করে জানতে পারি জ্যোতিষির সাথে কথা বলার পর তারা অনেকটা মানসিক শান্তি ফিরে পেয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের পড়ার প্রতি অমনোযোগের মত সমস্যার অনেকটা সমাধানও হয়েছে বলে তাদের মনে হয়। ব্যাপারটা গোলমেলে লাগে, তাই আমিও জ্যোতিষির সাথে কথা বলব বলে ঠিক করি। অনিমেষ শাস্ত্রির সাথে ফোনে কথা বলা যাবেনা জেনে আমি নাটক করি আমি প্যারালিসিসে আক্রান্ত, তাই ফোনে কথা বলতে চাই। আমার পরিচিত এক দাদা অনলাইন ব্যাংকিংএর মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য করে ও আমার কথা হয়। প্যারালিসিস ছাড়া বাকি সমস্যা আমি সত্যি বলি। লক্ষ্য করলাম, গ্রহরত্নের ভাঁটবকা ছাড়া উনি যেটা করলেন, সেটিকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় কাউন্সিলিং বলে। সমস্যা খুলে বলার পর আত্মীয়তুল্য ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান বোঝানো, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। তারপর শুরু করি সদগুরুর YouTube ভিডিও শোনা। সেখান থেকে মনে হয়: ১) উনি ইংরেজি ভালো বলতে পারেন বলে ডিগ্রিধারীরা উনার শরণাপন্ন হন। ২) উনি একজন দক্ষ কাউন্সিলার।
এখান থেকে আমি সিদ্ধান্তে পৌছই এনারা নতুন রূপে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে অবৈজ্ঞানিক চিন্তা ছড়াচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে মানুষ ইঁদুর দৌঁড় দৌঁড়চ্ছে। তার ফলে মানসিক স্বাস্থের উপর চাপ বেড়েছে। অথচ মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত স্টিরিওটাইপ্ড, ক্লিনিকাল কাউন্সিলিং করাচ্ছে শুনলে লোকে পাগল ভাববে, সেই ভয় যেতে পারেনা। কিন্তু ধর্মিয় গুরুর প্রতি আস্থা সকলের আছে। এই সুযোগকে ব্যবহার করে বাজার মাত করছে "স্পিরিচুয়াল গুরু"রা।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: আমরা কি করতে পারি? সমালোচনা না হয় করলাম, কিন্তু শুনবে কারা? কেনই বা আমাদের কথা শুনতে আসবে? একটা ইকোচেম্বারের সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছেনা তাহলে যেখানে আমরাই কথা বলব আর আমরাই শুনব? এই চক্রব্যুহ্য থেকে রেহাই কোন পথে?
আমার মত, আমরাও শিক্ষা নিতে শুরু করি ক্লিনিকাল কাউন্সিলিং-এর। এখন ৬ মাস থেকে ১ বছরের কোর্স হয় অনেক এই বিষয়ে। তারপর বিনামূল্যে কাউন্সিলিং শুরু করা হোক। তবে কাউন্সিলিং নামে নয়, "যুক্তিবাদী বশিকরন" এর মতো নামে, যেখানে "যুক্তিবাদী বশিকরনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা হয়"। শুরুতে লোক কম আসবে, এবং আমাদের যেচে যেতে হবে জনতার মধ্যে। তবে ফল মিলতেই লোকেরা আসা শুরু করবে। বেশ ভালোরকমের ভিত্তি পেলে সম্মেলন করে আমাদের রহস্য ফাঁস করা হবে। একই সাথে ভণ্ডামকে সায়েস্তা অপর দিকে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনে নতুন জোয়ার আনার প্রবল সম্ভাবনা আছে এতে এর মধ্যে বলে আমার মনে হয়।
আপনাদের পর্যালোচনা ও মতামতের জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকব।
Comments