কবিতা:
অজ্ঞের রাজ -প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল/৩৩
শিক্ষক-বন্দনা -শ্রেষ্ঠী দে/৩৫
সংক্রমণের কড়চা -সাবিত্রী দাস/৩৬
নিতে হবে সাম্যের পাঠ -প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল/৩৭
কত বিলাসিতার অভাব।-ঋতম সাহা/৩৯
যুব সমাজ -জামাল আনসারী/৪০
লকডাউন ৮ -জামাল আনসারী/৪২
ভ্রমণ:
o চুপি পাখিরালয় -অজিত মিত্র/৪৩
কবিতা:
অজ্ঞের রাজ
-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল
কিছু মানুষ আজো বড়ো বেইমান,
হিংসা দ্বন্দ্বে প্রায় সকলেই সমান।
ধর্মের ধ্বজা করে যারা বহন,
তাদের সবার হয় কলুষিত মন।
ধর্মের বিরোধিতায় মানুষ ব্যাজার,
সমাজটা তাই আজ হলো ছারখার।
ধর্মের ধোঁয়ায় অন্ধকারে এই দেশ,
বক ধার্মিকরা করছে শুধু আয়েশ।
সত্যের গলায় পড়েছে দড়ির ফাঁস,
সত্যের তাই আজ হয়েছে বনবাস।
দেশে অন্ধ ভক্তের ভীষণ ত্রাস,
মানবতা তাই এখন হচ্ছে হ্রাস।
অন্ধ বিশ্বাস মোদের মানতেই হবে,
সত্য বললে আজ জীবন নাহি রবে।
কবির কলম থেমে গেছে তাই,
অকারণে কে জেলে যেতে চাই।
অন্ধের কুশাসনে অন্ধের এই দেশ,
অন্ধ ভক্তর ধরে শুধু সাধুর বেস।
ধার্মিক ভণ্ড লাঠি হাতে খাড়া,
কুসংস্কার প্রচার করে তারা।
প্রতিবাদের ভাষা কণ্ঠেই যে রয়,
কলম ধরতে লাগে বড়ো ভয়।
অন্ধের দেশে শুধু ধর্মের বিকাশ,
এটাই হবে আগামীর ইতিহাস।
মহা অজ্ঞ যুক্তি যে মানে না,
অজ্ঞ কে দেখলেই যাবে চেনা।
অন্ধ পণ্ডিত অনেক আছে দেশে,
তারা রয় অন্ধ কে ভালো বেসে।
নির্বোধেরা মহাসুখে অন্ধের স্বর্গে,
যুক্তি প্রিয় না মরেও রয় মর্গে।
সমাজ পতি সমাজের ঠিকাদার,
ধর্মানুভূতিতে ছাড়ে হুংকার।
ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্ব আমি নাহি চাই?
দলিতরা পাক মানুষের বুকে ঠাঁই।
সকল ধর্মে যদি শান্তি খুব রয়,
ধর্ম নিয়ে লড়াই কেন তবে হয়?
সৃষ্টির সেরা জীব পৃথিবীর মানুষ,
আজো তারা হয়ে আছে বেহুঁশ।
সকল কর্মের মাঝেই ধর্ম খুঁজি,
কর্ম হয় যে সকল ধর্মের পুঁজি।
শিক্ষক-বন্দনা
-শ্রেষ্ঠী দে
শিক্ষক মানে আলোর দিশারী,
জীবনের পথপ্রদর্শক।
শিক্ষার মহাসাগরে তিনি,
জ্ঞানের প্রদীপ প্রজ্জ্বলক।
শিক্ষক জাগান রুক্ষ পাহাড়ে,
সবুজ প্রাণের সাড়া।
তাঁরই স্পর্শে চূর্ণ হয়,
অজ্ঞানতার বদ্ধ কারা।
শিক্ষক মানে ধূসর মরুতেও ----
অমৃতের সন্ধান,
তাঁরই আশ্রয়ে বাঁচে অবহেলিত -
হাজারও কোমল প্রাণ।
শিক্ষক হলেন নৈতিকতা-আদর্শের
সমাহার,
তিনিই পার্থিব জগতে আজও
পরম জ্ঞানের আধার।
শিক্ষক মানে জীবনের পথে
সকল সমস্যার সমাধান,
আনেন জীর্ণ নদীর বুকেও
মিষ্টি মধুর কলতান।
শিক্ষক হলেন আলোর পথের
সত্য নির্ভীক যাত্রী,
তাঁরই নির্দেশিত জীবনাদর্শে চলেছে
সহস্র ছাত্রছাত্রী।
শিক্ষক মানে শ্রদ্ধার পাত্র
শিক্ষার অতি সুজন,
ভালোবাসার আবরণে করেছেন
উকিল-ডাক্তার সৃজন।
জন্ম থেকে মায়ের কাছে
শুরু শিশুর শিক্ষা,
জীবনে চলার পথে শিক্ষক দিলেন
সততার ব্রতে দীক্ষা।
সংক্রমণের কড়চা
-সাবিত্রী দাস
সকল বিপদ করতে কাটান হাঁকেন তারা নিদান,
কবচ তাবিজ হোম-যজ্ঞের হরেক বিধি-বিধান।
বাক্ -সিদ্ধ,দিক-সিদ্ধ, সু-সিদ্ধের শঙ্কা,
ডুবলো এবার তরী নাকি বাজলো মৃত্যু-ডঙ্কা!
দিন ফুরিয়ে সিঁধেল আঁধার এবার বুঝি নামে,
নীরবতার ঢল নেমেছে গৌরবময় ধামে।
সত্যি নাকি অস্তাচলে সিদ্ধ রবি-শশী!
সেবা-যজ্ঞের দিব্যারতি, বচন এখন বাসি।
বিশ্বজোড়া মৃত্যু-মিছিল কাঁপছে জীবন-ছন্দ,
তাহলে কী সংক্রমণে ব্যবসা এবার বন্ধ!
অষ্টোত্তর শতনামের হরেক কিসিম বাবা,
জননীরাও কম যান না বেড়াল বগল দাবা!
আস্থা তবে শেষ হলো কী, চলছে গজব আড্ডায়।
পঞ্জিকাদির অর্থনীতি সংক্রমণের গাড্ডায়!
বাকসিদ্ধা জননীদের কণ্ঠ এখন রুদ্ধ,
লক-ডাউনে তারাও নাকি বেজায় আছেন ক্রুদ্ধ।
যেতে যেতেও যায় নারে ভাই এমন ইমপ্রেশন!
অতিমারির জাস্টিফাই এর দারুণ এক্সপ্রেশন!
পুরুষ্টু ঐ শিখার বাহার গায়ের নামাবলী
বিংশোত্তরী মতে এখন পাড়ছে তারা গালি।
কোন তরীতে মিলবে এখন কে কোন মোহনায়,
সংক্রমণেও বিশ্বায়নের আকাশ ছুঁয়ে যায়।
নিতে হবে সাম্যের পাঠ
-প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল
দাম বাড়াতে ধর্ম গ্রন্থ
রাখো সবাই ঘরে;
দামী জীবন রক্ষা করো
বিজ্ঞানের বই পড়ে।
ধর্ম গ্রন্থে ডুবে থেকে
বড়ো হলো কেবা?
বিজ্ঞান পড়ে ডাক্তার হয়ে
জীবের করো সেবা।
ধর্ম গ্রন্থে ভেদাভেদি
লিখে নিজের মতো;
দ্বন্দ্ব সদাই লাগেই থাকে
হিংসা অবিরত।
বিজ্ঞান শেখায় সাম্যের নীতি
সব মানুষই সমান;
ভিন্ন জাতের একই রক্ত
বিজ্ঞান করলো প্রমান।
ধর্ম গ্রন্থ পড়ে মানুষ
যদি ভদ্র হতো;
ধর্মের নামে খুনোখুনি
এতো নাহি হতো।
ছোটো থেকে শিশুর মনে
জাগাও বিজ্ঞান কথা;
জীবন যুদ্ধে জয়ী হবে
কমবে মনের ব্যথা।
অন্ধ জনে ধর্ম গ্রন্থে
ডুবে সদা থাকে;
নিজের মতো ধর্মের বাণী
শুনায় যাকে তাকে।
মনে রেখো বিজ্ঞান পড়লে
সভ্য হয়ে যাবে;
সবার মাঝে থাকবে তুমি
পরম আদর পাবে।
কত বিলাসিতার অভাব।
-ঋতম সাহা
ধর্ম হোক বা বিজ্ঞানের নাম, হোক কুসংস্কারের দাপট বা প্রযুক্তির খাম,
একলা মানুষ হোক বা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র, বাড়িয়েছে বারবার প্রকৃতির অভিমান,
করে ধ্বংশ, প্রকৃতি একাংশ, মেতেছে মানুষ একপ্রকার নিজেরই হত্যালীলায়,
এভাবেই চললে সংকটে ভবিষ্যত, জানিনা কীভাবে থাকবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায়।
এই সৃষ্টির সৌন্দর্য্যের অনেক তত্ত্ব, আদি থেকে অভিনবত্ব,
কেও বিশ্বাসী যুক্তি তর্কে বিজ্ঞানী পন্থায়,
কারো মতে মানব সৃষ্টি নাকি আডাম ইভের ভালোবাসায়।
নানা মানুষের নানা মত, নানা বিশ্বাসের নানা পথ।
কোনোটা মিথ্যা, কোনোটা সত্য,
কোনোটা আগামী কোনোটা অতীত বৃত্তান্ত,
পরিবেশের সুস্থতাই শেষকথা এখন, নয়তো আগামীর অপেক্ষায় ভয়ংকর ভবিতব্য।
প্রকৃতির যে সকল সম্পদ দূষিত আজ,
আনতে হবে সেই ক্ষতিপূরনের নতুন পথ,
হবে দূর প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে কলুষতার ভাঁজ,
সকলের সামনে এখন আগামীর নতুন শপথ।
আমাদের অভ্যাসে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, বন্য জীব বা পতঙ্গ ক্ষুদ্য,
করতে হবে সুরক্ষিত তাদের অস্তিত্ব,
সুস্থ বাস্তুতন্ত্রের কারিগর আমরা সকলে,
প্রত্যেকের জীবনের রয়েছে প্রকৃতির সমান গুরুত্ব।
ফেরাতে হবে ধোঁয়াশা মুক্ত আকাশে শুদ্ধ সমীরন, ফেরাতে হবে বর্জ্যমুক্ত স্নিগ্ধ শীতল নদীর জল,
ফেরাতে হবে দূষনমুক্ত শস্য শ্যামলা উর্বর ভূতল, ফেরাতে হবে মহীরূহে ঘেরা সবুজ সম্বল।
যুব সমাজ
-জামাল আনসারী
একবিংশ শতাব্দীর যুব সমাজ মেরুদণ্ডহীন,দুর্বল,
প্রতিবাদহীনতায়,ভেঙেছে তাদের যুগ যুগান্তরের সঞ্চিত মনোবল।
সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে,পৃথিবী দিশাহারা,
দ্রুত থেকে দ্রুততম বেগে ধাবিত,
হিংসার লেলিহান শিখা।
বিশ্বের কেউই আজ আর সুরক্ষিত নয়,
ক্রমবর্ধমান বাক্ স্বাধীনতার কণ্ঠরোধে__
সবাই ভীত, সন্ত্রস্ত,
ঘোষিত মানবতাবাদীরাও বর্তমানে বাক্ হারা।
প্রাণ চঞ্চল যুব সমাজ তবে কি নীরব দর্শক?
না, তা হয়তো নয়..
বহু দলে আজ তারা ছন্নছাড়া।
পৃথিবীর কোনায় কোনায় দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
পৌঁছে গেছে উগ্রবাদের রণংদেহি হুংকার।
দৈনিক খবরের কাগজে,টিভির পর্দায়,
এখন চোখ রাখলেই শোনা যায়,
অসহায় মানুষের গগনস্পর্শী বুকফাটা করুণ আর্তনাদ।
ধর্মের জন্য, কল্পিত প্যুণ্যফলের আশায়,
কত প্রানচঞ্চল, তরুণ তরুণী,
না বুঝেই ঝাঁপিয়ে পড়ে,
ধর্মের ষাঁড়েদের পাতা ফাঁদে।
হাজার হাজার কুকর্ম করেও
তারা স্বর্গে যাওয়ার জন্য অঝোরে কাঁদে।
হায় রে দেশের যুব সমাজ!
অসীম নীল মত্ততার টানে,বিকৃতরুচির উত্থানে,
ক্রমশ অবক্ষয়িত যুব সমাজ।
যারা গোটা পৃথিবীকে উল্টে পাল্টে,
দেওয়ার অসীম ক্ষমতা রাখে,
তারা কেন আজ ভয়ে কাঁপে?
এই যুব সমাজের দুর্দশা দেখে,
বসুন্ধরাও আজ নীরবে কাঁদে।
এ যুব সসমাজের ঘুম ভাঙবে আর কবে?
তারা খুলে ফেলবে কবে নিজের চোখের ঠুলি?
অদৃশ্য বিভেদের মায়াজাল ছিন্ন করে,
মানুষের সাথে মানুষের হবে কি কোলাকুলি?
এ ধরাতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই শ্রেষ্ঠ নয়,
আমরা সবাই মানুষ....
এটাই হোক আমাদের একমাত্র পরিচয়।
বিদ্যাসাগরের জন্মদিন অর্থাৎ ২৬-সেপ্টেম্বর দিনটিকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করুন।
লকডাউন -৮
-জামাল আনসারী
করোনা এসে মানুষে মানুষে বাড়িয়ে দিল অবিশ্বাস,
মানবিকতা যতটুকু বেঁচে ছিল, সেটারও হবে বিনাশ।
মানুষের বিপদ হলে, মানুষ সাহায্যের জন্য যেত ছুটে,
প্রতিবেশীর দুঃচিন্তায়, অনেকের রাতের ঘুম যেত টুটে।
সেই সব সুখের দিন আর নেই। সব কিছু হয়েছে অতীত।
ভবিষ্যতে ধংসের দোরগোড়ায় মানুষ হয়েছে উপনীত।
দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, বিশ্ব থেকে নিচ্ছে বিদায়।
পিতা মাতার করোনা, নিজের সন্তান এড়িয়ে যাচ্ছে দায়।
এতো সুন্দর পৃথিবীটা ভর্তি হচ্ছে স্বার্থপর আর স্বার্থপরে।
করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ― পড়ে থাকছে অন্ধকার ঘরে।
যে সন্তানকে কুড়ি বছর ধরে লালন পালন করে মাতা,
সেই সন্তান অকৃতজ্ঞ, যে দায়িত্ব পালনে ধরে না ছাতা।
ধীরে ধীরে লুপ্ত হচ্ছে মানবিকতার প্রশস্ত ডাল- পালা,
যারা ফুটপাটবাসী,যাদের মাথা গোঁজারও নাই চালা।
লকডাউনে ওরা কেমন আছে? খোঁজ নিচ্ছে না কেউ,
আবার শুনছি আসতে চলেছে, করোনার তৃতীয় ঢেউ।
কত মানুষ না খেয়ে মরছে দেশে? সঠিক হিসাব তার নাই,
করোনার মরছে কত? মিনিটে মিনিটে তার হিসাব পাই।
করোনায় মরুক আর না খেয়ে মরুক, দুটো মৃত্যুই সমান,
সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে, কমবেই মৃত্যুর ব্যবধান।
ভ্রমন বিষয়ক:
চুপি পাখিরালয়
-অজিত মিত্র
ঘরে বসে আছি,হটাৎ সৌরভের ফোন, দাদা যাবেন নাকি চুপিতে, আমিতো যাব বলে কথাটা লুফে নিলাম। সুশান্ত, আমার পরিচিত পাখি প্রেমী,ওকে বললাম, সাথে সোরভ কেও বললাম রাজি।
পরদিন ভোর ৬ টায় বিরাটি মোর এসে সৌরভের গাড়িতে চেপে বস্ লাম আমরা ৩ জনে, কল্যানী এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলাম, কিছু বাদে সোদপুর মোড়, চা এর বিরতি। ডিসেম্বর মাস, বেশ ঠান্ডা লাগছে,চা খেয়ে গাড়ীতে উঠে পড়লাম,গাড়ী চলতে লাগল, দুপাশে দেখতে দেখতে চলা, সাম নেই রাস্তার ধারে বাজার, বহু মানুষ রাস্তা পারা পার করে বাজার করছে, গাড়ি থামাতে হল, আবার চলা, কিছুটা যাবার পর বাদিকে ধান খেত, বেশ লাগছে দেখতে, একটু গিয়ে ডানদিকে ফুল কপি, পালংশাকের খেত, অনেকটা জুরে চাষ করেছে, ফেরার সময় কিনব, যদি মনে থাকে। এরই মধ্যে কালনা তে এলাম,কিছু খেয়েনিলাম। আমি ক্যামেরা নিয়ে এদিক ওদিক ছবি তুলছিলাম দেখে কয়েকজন উৎসুক হয়ে বলল আপনারা কি কাগজের লোক? আমি হেসে ফেলে বললাম না, আমরা পুরবস্থলিতে যাচ্ছি পাখি দেখতে, ওরা অবাক! পাখি দেখতে কলকাতা থেকে এতদুরে??দোকান দার ওদের কথায় বাধা দিয়ে বললেন যে ওখানে গংগা নদীতে বিরাট চড় আছে, সেখানে অনেক বিদেশী পাখি আসে, ওনারা ওইখানে যাচ্ছেন মনেহয়।হেসে বললাম ঠিক বলেছেন। চা খেয়ে ওখান থেকে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম, কিছু পরে পারুলিয়া মোরে এলাম। যেখান থেকে পুরবস্থলি হয়ে আমাদের গন্তব্য স্থলে যাওয়া।এই চুপি পাখিরালয় দিনে দিনে বেস আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছ, ফলে বাড়ছে পরযটকদের ভির। বেশ কিছু আবাস গড়ে উঠেছে, মুড়ি গঙ্গার তীর বরাবর, আবাসের বারান্দা থেকে পরিযায়ী পাখিদের দেখতে পাওয়া যায়। একটা প্রজাপতি পারক গড়ে উঠছে। দেখলাম খুব বড় বড় আমবাগান,আবার বেস কিছুটা চাষের খেত। মাটির রাস্তা, দুপাশে মাটির বাড়ি,ভালোই লাগছিল। গাড়ি থেকে নামা মাত্রই নবি বক্স বাবু এগিয়ে এলেন তার ঔষধের দোকান থেকে,এখানে খুবই পরিচিত লোক, এখানে যারা আসে, সবাই ইনার সাথে যোগাযোগ করে আসে, পাখি প্রেমী। থাকা খাওয়, নৌকায় ঘোরা, সাথে গাইড, সব যোগাযোগ করে দেন, আমরা শুভেচছা বিনিময় করলাম, যেখানে থাকব, সেখানে নিয়ে গেলেন।আমরা তাড়াতাড়ি ব্যাগ পত্তর নামিয়ে সবাই ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সামনেই ছোট্ট একটা বাজার, সপ্তাহে একদিন হাট বসে, বেস কয়েকটা দোকান আছে, খাবারের দোকান, মিস্টির দোকান ও দেখলাম। নবি বাবু বললেন এখন এদিক ওদিক ঘুরে ছবি তুলুন, দুপুরে খাওয়ার পর গাইড আসবে, ১টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়ব। এখানে দুটো সেশন, সকাল ৬টা ---১১ টা, আবার ১টা ---৫ টা। তবে চাহিদানুযায়ী সময়ের পরিবর্তন হয়।যদিও সবটা নদিতে, অবশ্য ভ্রমন বা পাখি দেখা কিন্তু গংগা বক্ষে, একটা ব্যাপার, এখানেও দেখলাম সভ্যতার অসুখ, নদীর ধারে আম বাগানে বন ভোজন হচ্ছে, খুব জোরে ডি যে সহ গান, নাচ চলছে। রান্না বান্না চলছে কাঠ জ্বালিয়ে, বেস কয়কটি দল রয়েছে। আধপোড়া কাঠ এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এবং এঠো কাটা সহ খাবার, থারমকলের থালা, তরকারির চোকলা সমেত চারদিকে ছড়ানো, একটা আধা নরকের মত অবস্থা, বললাম এই অবস্থায় পাখি আসবে কি করে? জানলাম এখানে একটা পক্ষি সমিতি আছে, নবি বাবুও যুক্ত, বলেন প্রশাসন কে বলেছিলাম, কিছুদিন বন্ধ ছিল, আবার চালু হয়েছে, কেউ কিছু বলার নেই। অবশ্য আশাকরি আগামী দিনে সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসবে। এদিকে আমরা ১টার মধ্যে হাটের কাছে চলে এলাম, আমাদের সাথে পাখি ভাল চেনে যে, তার সাথে পরিচয় হল, নাম তপন। নদীর পাড়ের দিকে যেতে গিয়ে বেশ কিছু বাড়ি ঘড় দেখলাম, বেশিরভাগ ক্রিশি জীবি।নোউকা অপেক্ষা করছে, নদীর পাড় বেশ উঁচু খাড়াই পথ, ঢাল বেয়ে নামতে হবে, এই বুঝি নদীতে পড়ে যাব, নৌকায় ওঠার পর চালাতে লাগলো বইঠা সহকারে অবশ্য বড়ো লগিও আছে, আমরা মুল নদীতে না গিয়ে, নদীর পাশেই একটা বড়ো জলাশয়ে ঢুকে পড়লাম, কিছুটা কচুড়ি পানা আছে, আমরা কিছুটা দুরত্ব রেখে চললাম, কারন সাপের উপদ্রব আছে, অনেক বাশের কঞ্চি পোতা রয়েছ, দেখলাম মাছরাংয়া(বুক সাদা), প্যারেড কিংফিশার, ক্যাটেল ইগ্রেট, রাংয়া মুড়ি, ভারি সুন্দর দেখতে, মাথাটা লাল এবং গোলাপি ঠোঁট, ক্যামেরার খচাখচ আওয়াজে উড়ে যাচ্ছে, সৌরভ কেমন হল, মনের মতো হলনা অজিত দা, রাংয়া মুড়িটা কচুরিপানার উল্টা একদিকে গিয়ে বসলো।গাড়ী হলে ঘুড়িয়ে নেওয়া যেত, নোউকার সময় লাগবে, যেতে যেতে পালিয়ে যাচ্ছে।সাম নের দিকে কয়েকটি পারপেল সোয়ান হেন দেখলাম, রোগা লম্বাটে, কি সুন্দর জলে সাতার কাটছিলো পেখম তুলে।অদ্ভুত ধরনের পাখি, না দেখলে ভাবা যায়ন। জল ময়ুর বলে, রাজারহাটে একটা জলাশয়ে দেখেছিলাম। বিকাল হল, এখানে শেষ করে ঘরে ফিড়ে এলাম। পরদিন সকাল ৬ টার আগে তৈরি হয়ে বাইর এসে চায়ের দোকান খোলা দেখে চা খেয়ে নিলাম, ভালো চা, নদীর পাড়ে গিয়ে নৌকাতে উঠলাম। মূল নদীতে প্রবেশ করলাম, বেস স্রোত। একটা শুশুক দেখলাম, উঠছে আর ডুব দিচ্ছে।অনেক দুর অব্দি আমাদের সাথে ছিলোএকটু ভয় পেয়েছিলাম, এতো কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, বেস বড়। ভাবলাম নৌকা না উল্টিয়ে দেয়, মাঝি বলল কিছু হবে না।দুরে দেখতে পাচ্ছি নদীর মাঝখানে লম্বা ধরনের বিশাল দ্বীপের মত, ওরা বলল ওই টাই চড়। ওদিকে একঝাক রুডিশেল ডাক- সুদুর লাদাখ থেকে আসে, ভাবাযায় কত শত মাইল পারি দিয়ে আসে, ওদের ডাক দুর থেকে শোন যাচ্ছে, কিছুটা ধারের দিকে এলাম, দেখলাম প্যারেড কিং ফিশার, সাথে লেসার হুইসেল ডাক ও গ্রে হেরন, ক্যাটেল ই গ্রেট, এবার চড়ের উপর উঠলাম, একটু হাল্কা হয়ে নিলাম সবাই, সাম নে দেখলাম দুটি লোক ঝগড়া করছে, কার কতটা জমি। আমি বললাম মিলে মিশে চাষ কর, কিছুদিন বাদেই ডুবে যাবে, তখন কি করবে হাসলো ওরা। চরে হাটছি, হটাত এক ঝাক পাখি উড়ে গেল, মাটির রঙের সাথে মিশেছিল, চড়াই পাখির মতন, বলল বাবুই বাটান, অত পাখি উড়ছে বসছে, বেশ লাগছে কমন কিং ফিশার দেখলাম, বেলা হয়ে এলো নৌকায় উঠলাম, স্রোতের উল্টা দিকে চলা, কিছুটা আড়া আড়ি ভাবে চলতে লাগলাম, কি ভাবে নদীরপাড় ভাংছিল ভয় লাগছিলো, ধপাস ধপাস করে জলে পরছিল মাটির চাক গুলি। একটা মজার ঘটনা চোখে পড়ল,একটা কিং ফিশার, বাটা ধরনের মাছ ধরেছে,ওর থেকে আকারে বর, মাছটা নড়ছে আর ও মাথা ঘুরিয়ে পাশের ডালে আছার মারছে একাধিক বার, দারুন লাগল। বেস হাশিও পেল খাওয়ার ধরন দেখে। মাছটা মড়বে,নরম হবে, তখন ও গিলবে। এক সময় আমরা তীরে এসে গেলাম, গাইড মাঝি ওদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিলাম, আমরা লজে এলাম, পরদিন ঠিক করেছিলাম, যে এই গ্রামটা শুধু পাখিরালয় নয়,মহা মনীষীদের জন্মভুমি, আমরা সেই ইতিহাস কে ছুয়ে যাব। এই চুপি গ্রামে জন্মেছিলেন অক্ষ্য়কুমার দত্ত ও তার নাতি কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত।গেছিলাম দেখতে, খুব পুরানো বাড়ি। আরেকজন ভারতীয় ভাষা, দরশন, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মহা পন্ডিত শ্যামদাস বাচস্পতি এখানে জন্মেছিলেন১৮৪৯ সালে, বারির সামনে ফলকে লেখা। কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করে বিখ্যাত উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী, সারা পরে গেছিল দেশজুরে। এই গ্রামেই জন্ম। আরও অনেকেই আছেন। পাখিরালয় দেখার সাথে ওইতিহাসিক স্থানগুলি দেখে নিলে বেশ ভাল লাগবে। একটা কথা ওখানে ভাল পাটালিগুড় পাওয়া যায়, কিনতে কেউ ভুলবেন না।
শিক্ষনীয় মনোবিজ্ঞান, জেনে রাখা ভালো!
ফোবিয়া বা ভয়ের তালিকা জেনে নিন কে কোনটাতে আছেন পড়েছেন ও সে ফোবিয়া নাম কি।
ফোবিয়া বা অস্বাভাবিক ভীতিকে বর্ণনা করা হয় একটি স্থায়ী/দীর্ঘস্থায়ী ভয় হিসেবে যা কোনো বস্তু অথবা স্থান হতে পারে। যার ফলে ভুক্তভোগী বহুক্ষণ ধরে বাস্তবে রূপ নেবে ধারণা করে এর থেকে দূরে থাকে বা মানসিক চাপে থাকে এবং চিন্তার কথা কোনো কোনো সময় তা মারাত্মকও হয়। ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে[১]। আমাদের অতি পরিচিত ভয়গুলো হচ্ছে অন্ধকারে থাকার ভয়, নির্দিষ্ট প্রাণীর ভয় (তেলাপোকা, সাপ, কেঁচো, জোঁক), অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক ব্যাপারে ভয়, কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ভয় ইত্যাদি।
নিচের তালিকায় বিভিন্ন রকম ফোবিয়ার দেখা পাওয়া যাবে। অনেক ফোবিয়ার কথা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। কিছু কিছু সাইক্রিয়াট্রিক সাইট আছে যেগুলোতে এগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো হয়েছে, কিছু কিছুতে বিশদ বর্ণনা করা আছে প্রত্যেকটির। এখানে বিশদ বর্ণনা না করে শুধু তালিকায় নামগুলো যোগ করা হয়েছে।
মনস্তাত্ত্বিক ফোবিয়া: অনেকক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ফোবিয়া কথাটি এড়িয়ে আরো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। যেমন: ব্যক্তিত্ব ডিসঅর্ডার, এংজাইটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
o অটোফোবিয়া (Autophobia) – একাকীত্বের ভয়।
o আইচমোফোবিয়া (Aichmophobia) – তীক্ষ্ণ বা ধারালো বস্তুর ভয়।
o আগ্রাফোবিয়া (Agraphobia) – যৌন নিপীড়নের ভয়।
o ইমেটোফোবিয়া (Emetophobia) – বমি করার ভয়।
o ইরগোফোবিয়া (Ergasiophobia, Ergophobia) – কাজের ভয় যেমন সার্জনের সার্জারির অপারেশনের ভয়।
o ইরোটোফোবিয়া (Erotophobia) – যৌন বা ভালবাসা সম্মন্ধীয় প্রশ্নের ভয়।
o ইরিথ্রোফোবিয়া (Erythrophobia) – pathological blushing.
o এব্লুটোফোবিয়া (Ablutophobia) – স্নান, ধোয়া-মোছা অথবা পরিষ্কার করার ভয়।
o একুসটিকোফোবিয়া (Acousticophobia) – শব্দ ভীতি।
o এক্রোফোবিয়া (Acrophobia), এলটোফোবিয়া (Altophobia) – উচ্চতা ভীতি।
o এগোরাফোবিয়া (Agoraphobia), (প্যানিক ডিসঅর্ডার ছাড়া) – কোনো স্থান বা ঘটনার ভয় যেখানে পালানো বা সাহায্য অসম্ভব।
o এলগোফোবিয়া (Algophobia) – ব্যথার ভয়।
o এজিরোফোবিয়া (Agyrophobia) – রাস্তা পারাপারের ভয়।
o এন্ড্রোফোবিয়া (Androphobia) – মানুষের ভয়।
o এনথ্রোপোফোবিয়া (Anthropophobia) – মানুষের বা মানুষের সঙ্গী হওয়ার বা এ জাতীয় ভয় (একধরনের সামাজিক ব্যাধি)।
o এনথোফোবিয়া (Anthophobia) – ফুলের ভয়।
o একুয়াফোবিয়া (Aquaphobia) – জল বা জল জাতীয় পদার্থ, কেমিক্যাল ইত্যাদির ভয়।
o এরেখনোফোবিয়া (Arachnophobia) – মাকড়শার ভয়।
o এসট্রফোবিয়া (Astraphobia)- বিদ্যুৎ চমক বা বাজ পড়ার ভয়।
o এটিচিফোবিয়া (Atychiphobia) – অকৃতকার্য হওয়ার ভয়।
o এভিয়োফোবিয়া/ এভিএটোফোবিয়া (Aviophobia/Aviatophobia) – উড়ার ভয়।
o গ্লসোফোবিয়া (Glossophobia) - জনসম্মুখে কথা বলার ভয়।
o ব্যাকটেরিয়াফোবিয়া/ মাইক্রোফোবিয়া (Bacillophobia, Bacteriophobia, Microbiophobia) – অণুজীব এবং ব্যাকটেরিয়ার ভয়।
o সিবোফোবিয়া, সিটোফোবিয়া (Cibophobia, Sitophobia) – খাবারের প্রতি বিরক্তি বা ভয়।
o ক্লাসট্রোফোবিয়া (Claustrophobia) – বদ্ধ জায়গার ভয় যেখানে পালানো বা আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
o কোলরোফোবিয়া (Coulrophobia) – ভাড়েঁর ভয়।
o ডেসিডোফোবিয়া (Decidophobia) – সিদ্ধান্ত নেয়ার ভয়।
o ডেন্টালফোবিয়া (Dental phobia, Dentophobia, Odontophobia) – ডেন্টিস্ট বা দাঁত সম্বন্ধীয় ব্যাপারে ভয়।
o ডিসপোসোফোবিয়া (Disposophobia) – কোনো কিছু হারানো বা মুক্ত হওয়ার ভয়।
o ডিসফোফোবিয়া (Dysmorphophobia) – সত্যিকার অথবা কল্পিত দেহ সমস্যার ভয়।
o (Friggatriskaidekaphobia) - ১৩ই শুক্রবারের ভয়।
o গেলোটোফোবিয়া (Gelotophobi) – কৌতুক করা বা হাসাহাসি করার ভয় (নিজেকে নিয়ে)।
o জিমনোফোবিয়া (Gymnophobia) – নগ্নতার ভয়।
o হেলিয়োফোবিয়া (Heliophobia) – সূর্য অথবা সূর্যের আলোর ভয়।
o টেলিফোন ফোবিয়া (Telephone phobia) – ফোন ধরা বা কথা বলার ভয়।
o টেটরাটোফোবিয়া (Tetraphobia) – ৪ নম্বর সংখ্যার ভয়।
o থানাটোফোবিয়া (Thanatophobia) – মারা যাওয়ার ভয়।
o টোকোফোবিয়া (Tokophobia) – সন্তান জন্মদানের ভয়।
o ট্রামাটোফোবিয়া (Traumatophobia) – আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ভয়।
o ট্রিসকএইডিকাফোবিয়া (Triskaidekaphobia), (Terdekaphobia) – ১৩ নম্বর সংখ্যার ভয়।
o ট্রিপানোফোবিয়া (Trypanophobia), (Belonephobia), (Enetophobia) – সূচ বা ইনজেকশনের ভয়।
o ওর্য়াকপ্লেসফোবিয়া (Workplace phobia) – কর্মক্ষেত্রের ভয়।
o জেনোফোবিয়া (Xenophobia) – বিদেশি, অচেনা কিছু বা লোকের ভয়।
o হিলোফোবিয়া বা এক্সিলোফোবিয়া (Xylophobia), Hylophobia, Ylophobia - গাছ বা বন জঙ্গলের ভয়।
তথ্যসূত্র : ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১১।
চেতনা পত্রিকার অক্টোবর সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান yuktibadira@gmail.com এ। যুক্তির পথে আমরা। ধন্যবাদ।
Comments