সমঝোতা
- বিমুক্তি
দশ টাকার দুটো নোট হাতে নিয়ে বেরিয়েছি,
আজ একটা দফা-রফা করতেই হবে!
আজ দশ টাকার দুটো নোট নিয়ে আমি যাচ্ছি,
রাষ্ট্রের সাথে একটা সমঝোতায় আসতে।
আমি একটা মস্ত বড়ো পাহাড় বেয়ে রাষ্ট্রের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম,
আমার হাতে থাকা দশ টাকার নোট দুটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে ততক্ষণে,
সেই দুমড়ানো কাগজগুলো ছুঁড়ে মারলাম রাষ্ট্রের মুখে
রাষ্ট্রের নাকের সামনে ঘুষি বাগালাম,
চোখ দুটি বড় করে বললাম,
''জানো তুমি! জানো! গত তিনদিন ক্রমাগত ভাবতে ভাবতে
তোমার দুরবস্থা নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলাম।
আমার তিনদিনের পরিশ্রম তোমার কোনো পত্রিকা ছাপাতে চায় নি।
অতঃপর একটি অনলাইন ম্যাগাজিন বিনামূল্যে সেই গল্প ছাপালো।
একটা পয়সাও না নিয়ে, তিনদিনের ভালোবাসা দিলাম,
আর তোমার পুলিশ কি-না আমাকে জেলে পুরার কথা ভাবছে,
তোমারই দুরবস্থা নিয়ে গল্প লেখার কারণে!
তাই নিজের একমাত্র সম্বল দশ টাকার দুটো নোট নিয়ে এসেছিলাম,
তোমার মুখে ছুঁড়বো বলে!"
আমার হাতে মার খেয়ে রাষ্ট্র তখন পুরো নেতিয়ে পড়েছে,
ওর উপরের পাটির অগ্রদন্ত্য দুটি উড়ে গেছে আমার ঘুষিতে।
ফোকলা দাত নিয়ে হাসতে হাসতেই রাষ্ট্র বললো,
"আমি তো নিজে নিজেকে চালাই না।
আমার মানুষেরাও আমাকে চালায় না,
এবং লেখক তুমিও চালাও না।
আমাকে মেরে কি লাভ বলো?"
আমি কথা হারিয়ে রাগে দুঃখে,
দশ টাকার নোট দুটি ওর দাতের ফাঁকে গুজে দিয়ে দৌঁড় দিলাম।
পুলিশ আমাকে খোঁজছে।
৩ মার্চ ২০২১
মুখোশ খোলার শপথ
-শুভায়ূ রুডান
ক্লান্ত চোখে দিনের শেষে ফিরেছি যখন অবশেষে,
দেখেছি আমি চাপা কান্নারা অপেক্ষারত দিনের শেষে।
মুখগুলো সব মুখোশ পরা ভিড়ের মাঝে হাস্যরত,
মুখোশ খুললেই উলঙ্গ রাজা চরিত্রগুলো রাবারের মত।
এসেছে সময় মুখোশ খোলার হাসি গুলো সব মিলিয়ে যাক,
উলঙ্গ রাজা ছুটে পালাক কাপড় খুঁজুক ঢাকতে লাজ।
এবার যখন মিছিলে যাবে সময় নিয়ে দুটো প্রশ্ন কোরো,
তোমাকে যারা স্বপ্ন দেখায়, স্বপ্নগুলো কি যাচাই করো?
এবার যখন মিছিলে যাবে সত্য মিথ্যার হিসেব নিও,
তোমাকে যারা শুধুই ঠকায় এবার তাদের চিনতে শেখো।
যেই মিটিংয়ে ভিড় বাড়াও, মঞ্চে খোঁজো তোমার তুমি,
সেই তুমি কি রেখেছে কথা? নিয়েছে তোমার খোঁজখবর।
সত্তর বছরে তোমার তুমিরা দিয়েছে শুধুই প্রতারণা,
যে দলেই তুমি আস্থা রেখেছ, জুটেছে শুধুই বিরম্বনা।
তাই এবার কোন দলের নয়,দাবী আদায়ের মিছিল হোক,
তাই এবার শেখানো স্লোগান নয়,দাবী গুলোই স্লোগান হোক।
তাই এবার শপথ রক্তে রাঙ্গা,তাই এবার যুদ্ধ হার না মানার,
তাই এবার মগজ দিয়ে মগজ ধোলাই,এবার যুদ্ধ পালটে দেওয়ার।
ফুলের রাজনীতি
-জামাল আনসারী
বঙ্গের ডাঙায় ফুটেছে দুটি ফুল, পদ্ম আর ঘাস।
দুই ফুলের সুগন্ধে আমজনতার উঠছে নাভিশ্বাস।।
কোন ফুল ছোট আবার কোনটা একটু বড়োসড়ো।
ফুলের রাজনীতিতে রাজ্যবাসী ভয়েই জড়োসড়ো।।
ছোট ফুলের নাম শুনলেই বড়ো ফুলের গাত্রজ্বালা হয়।
চোখ বন্ধ করলেও দেখছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।
বড় ফুলটাও নাকি ভাল নয়, গায়ে তীব্র সাম্প্রদায়িক গন্ধ!
বাম-রাম- অতিবাম, ফুলের রাজনীতিতে লাগিয়েছে দ্বন্দ্ব।।
গণতন্ত্র উৎসব নয়, বাংলায় বসেছে গণতন্ত্রের নিলাম
কেউ বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকায়, কারো হাজার টাকা দাম।
কোথায় গেল বাঙালির তেজ, আত্মসন্মান, বিবেকবোধ?
বেনিয়াদের কাছে শিরদাঁড়া বেচে গড়ে তুলছে প্রতিরোধ।
ফুলে ফুলে মারামারি, কাটাকাটি চলছে দেশের সমাজসেবা,
রাজনীতিতে দারুন লাভ,ফুলে ফেঁপে উঠছে নেতাদের ব্যবসা।
রাজ্যের কোথাও চলছে গোলাগুলি,কোথাও পড়ছে লাশ।
দুই ফুল মিলেমিশেই রাজ্যবাসীকে দিচ্ছে আচুলা বাঁশ।।
মাদুলি তাবিজ ঝাড়ফুঁক
-জামাল আনসারী
খুড়া ও খুড়া... টিনের আগুড় টা খুল ন চাঁড়ে কইরে,
খুড়া ও খুড়া... টিনের আগুড় টা খুল ন চাঁড়ে কইরে,
তোর ছুটু কাকী বিনা চিকিৎসাই যাবেক রে মইরে।
টিনের ঠকঠ্কানি আর ডাকা হাঁকার তরে
ধড়ফড়াইয়ে কাঁচা ঘুমেই চইখ কচল্যাই উঠে নিমাই ওঝা,
আগুড়ের ঠিনে আইসে গলার আওয়াজ আন্দাজ কইরে বলে―
এতো রাইতে কে কচ্চি রে আমার নাম ধইরে ডাকাহাকা??
আগুড়ের উল্টো দিকে হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলে,
আমি বঠি রে, নামোও কুহলির তোর মদনা কাকা।
খুল ন, কপাট টা একটু তাড়াতাড়ি,
তোর কাকী কেমন কেমন কইরছে রে,
চাঁড়ে চঅ ন,আমাদের বাড়ী।
মাদুলির ব্যাগটা বগলদাবা কইরে হন্ত দন্ত হইয়ে ছুটে নিমাই ওঝা,
মদনকাকার বাড়িতে ঢুইকেই রোগীকে নাইড়ে চাইড়ে বিজ্ঞের মতো বলে,
মদনা কাকা, একে লতাপাতাই ছুঁইয়াছে,,
মুখের থ্যেইকে ফেনা বাইরাচ্ছে,,
আর পায়ের উপরে দুটি দাগ থ্যেইকে রক্ত বেইরাছে।
আর শুন, বলিস না কাউকেই এই লতাপাতার কথা
আমি যখন আইসেছি তখন হবেই ঠিক ব্যবস্থা।
মদন কাকা ভইয়ে কাঠ,কপাট ধরেই থরথর কাঁপে
মাথায় দুই হাত নিয়ে বলে, কি হবে এবার !
ওঝা তড়িঘড়ি বলে ,ভাগ্যে যা আছে তাই হবে তুমার।
তবে চিন্তা করো না মদন কাকা―
আমি যখন আইসেছি,চেষ্টা কইরছি, ঝাড় ফুঁক কইরে,
"হে মনসা, হে কালী― কাকী যেন না যায় মইরে।
অং বং চং ক্যং বকের ঠ্যাং এ নমো নমোও,
সাপের বিষ ঝটপট শরীর থ্যেকে নামো নামোও।"
মাদুলি, তাবিজ, জল পড়া, তেলপড়া কত কান্ড!
ঝাড়ফুঁক― শত মন্ত্রেও বিষ আর নামে না,
মুখের ফেনাটা কিছুই কমে না।
রোগীর অবস্থা যখন কাহিল, বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে,
মদন কাকা তখন কাকীকে নিয়ে হাসপাতালের পথে ঝড়ের গতিতে ছোটে।
ডাক্তার যখন দেইখল্য রোগীকে,নাড়িটা টিপে টিপে, হাই হাই....
পরীক্ষা কইরে ডাক্তার জানাইলো, রোগী আর বেঁচে নাই।
পুনশ্চ: বিষাক্ত সাপে কাটলে ওঝার`পরে ভরসা করো না।
তুক- তাক, ঝাড়- ফুঁক, করে আর রোগীকে মেরো না।
অভেদ
-প্রদীপ চক্রবর্তী।
জলের ধর্ম প্রবাহমানতা
মানুষের মানবতা,
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম কলে
পিষ্ট আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।
হিন্দুর রক্ত লাল হলে
মুসলমানেরও তাই,
জগত জুড়িয়া মানব জাতি
কোনো ভেদাভেদ নাই।
কর্ম করলে ফলও মিলবে
বিজ্ঞান শেখায় তাই,
যুক্তিবাদী দার্শনিক মোরা
একে অপরের ভাই।
শোষনমুক্ত সমাজটা চাই
মাথা তুলে বাঁচতে,
শ্রমিকের হাতে হাতুড়ি নাচে
কৃষকের সাথে কাস্তে।
ความคิดเห็น