-অমিত দাস
প্রশ্ন হল ,একটা আদর্শ সমাজের শত্রু কারা বা কে? কিছু নতুন ভাবনা বা দৃষ্টিকোণ সজীবতার শিকড়প্রসারের পথে প্রধান বাধা হলো চমকিত গুঞ্জরিত প্রচলিত চিত্রকল্পের বাগাড়ম্বর । আমাদের শত্রু কে ?বস্তু না বস্তু আশ্রিত অ-শুভচেতনা , না সন্ধ্যাচেতনচালিত জনগণ ? বস্তু ছাড়া গুণ বা অপগুণের আশ্রয় কোথায়? যদি উভয়কে একসঙ্গে আঘাত করি তবে সুচেতনাপ্রাপ্ত হীরকরাজার সঙ্গেই বা মুখোমুখি হলে কেমন আচরণপ্রকৃতি হবে ? তবে কি রাজনীতিপ্রভাবিত জীবনই একমাত্র কার্যকরী সত্য, নাকি এই প্রশ্নের পেছনেও সমকালের প্রতাপ আছে? নতুন শিক্ষা ও পুরনো শিক্ষার সংঘর্ষে যে শক্তিশূন্যতা তৈরি হয় ,সেই দুই দলেরই আশ্রয় নিজস্ব যে অতীত ,তা-তো ব্যবসায়ীক সত্যপ্রভাবিত ।একথা তো সত্য এখন যা কিছু ঘটছে ,তা কিছুকাল পূর্বে ছিল অন্য। কিংবা এই বর্তমান 'আছে' এবং কিছু পূর্বের 'ছিল' বর্তমান নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপত্তার আধারে নির্বাচিত সত্যের দিকে যাত্রা করা সম্ভব যে ব্যষ্টির তা তো সমষ্টিবাচক অপেক্ষা ব্যক্তিগত আলোকপ্রাপ্তিকেই স্বীকার করে । তবে সমাজের জনমানুষদের কি কেবল ক্যানভাস-এর মূঢ়দর্শক হওয়াই নিয়তি, যাদের পোশাক নানারকম রং দিয়ে বারেবারে চেঞ্জ করা যায় । আর কোন না কোন নিয়মে কোন ব্যক্তির অর্ধেক মস্তিষ্কের মাধ্যমে হয়তো কোথাও উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রয়োজনতাড়িত হয়ে চালিত হয় অথবা মঙ্গলের জন্য বাকি অর্ধেক মাথার প্রভাবে প্রভাবিত হয় ?যদি তা-ই হয় তবে মার্কসবাদের টোটেম যাকে বলা হয় 'বিপ্লব ', তা রূপান্তরকামী সাময়িক আশাবাদের জননী । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বা শ্রীঅরবিন্দের 'সুপারম্যান' বা ব্যাখ্যাতীত মহাচেতনা তবে কি সংকেত দিতে চায়, কতটা অবভাস বা সমসাময়িকতা আক্রান্ত সত্য ,নাকি সমসাময়িকতাই এককমহাসত্য --যার কোন ক্ষয় নেই, সংশ্লেষ শুধু বাখতিনের দ্বিবাচনিকতা। শুধুই আকাশের মেঘ হয়ে সংসার করা ?
হিতবাদী ও 'আত্মানং বিদ্ধিঃ ' এই দুই আদর্শকে নিয়ে কিছুটা সুবিধাবাদী সমন্বয় করেই চলার চেষ্টা করে চলা যায়। আসলে রবীন্দ্রনাথের মতো এই প্রশ তবুও মনে আসে-- ইউরোপের হিতবাদী দর্শন ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হলেও একমাত্র আবশ্যক প্রয়োজনীয় নয় , তা উপায় হতে পারে ,কিন্তু উপেয় নয়। আমরা 'চতুরঙ্গ' দেখি কীভাবে নাস্তিক জগমোহনের নাস্তিকতার ছক ভেঙে যায়, হয়ত এখানেই লুকিয়ে ছিল সার্ত্রের 'বিবমিষা'র কারণ । মনের মধ্যে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে মানুষের জন্য তো কাজ করবো ,কিন্তু যাদের জন্য করব তারা যদি বাধা দেয় কিংবা একসময় তাদের যদি প্রয়োজন না থাকে বা শেষ হয়ে যায় ,তবে 'আমি' কী করবো..? একদিকে সেই কর্ম অনাসক্ত না হয়ে করার প্রবণতা চলে আসবে অন্যদিকে সংকীর্ণ উদ্দেশ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ার তীব্র আকর্ষণ চলে আসবে। তাই এটাই ভালো যখন কোথাও আমার বা কোনো ব্যষ্টির কোনো এক সামাজিক কর্মসত্তার অনুপস্থিতি থাকবে, তখন সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করে দাও , আর যখন দরকার হবে না কারোর, তখন অসীমের সাধনায় লীন হয়ে থাকো। যেসব মানুষ এই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এই দুইদিকের দর্শনের হদিশ পেয়েছেন তারা সত্যিই ভাগ্যবান। তাই মনে হয়.. এর থেকে যথাযথ লাইন বা দর্শন এখনো পর্যন্ত আদর্শ জীবনদর্শন--''দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়রে দেবতা।''
আচ্ছা এইযে আলোকপ্রাপ্তি, ব্যক্তিগত মনে ইউটোপিয়ান সমাজ জেগে থাকে এটাই কি নবজাগরণ ,যা ঊনবিংশ শতকে ঘটেছিল-- এটাই কি চিরকালীন শিক্ষার উদ্দেশ্য?!
Comments